যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর ক্ষমতা ত্যাগের পর প্রথম এক ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেছেন। শিকাগোতে এক অনুষ্ঠানে তিনি ট্রাম্প সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানান, বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্কারের সমালোচনা করেন বাইডেন।
বাইডেন তাঁর ভাষণে অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল কর্মী ছাঁটাইয়ের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার ফলস্বরূপ সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি সরাসরি ইলন মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (Department of Government Efficiency – DOGE)-এর কঠোর সমালোচনা করেন।
বাইডেন বলেন, এই সংস্থাটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের (Social Security Administration – SSA) কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। এর ফলে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে।
বাইডেন বলেন, “এই প্রশাসনের আমলে ১০০ দিনের কম সময়ে অনেক ধ্বংসাত্মক কাজ হয়েছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।” তিনি আরও যোগ করেন, “তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোপ বসিয়েছে, যেখানে ৭,০০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে, এসএসএ-এর পক্ষ থেকে বাইডেনের এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বাইডেনকে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এসএসএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সুবিধাভোগীদের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন (এসএসএ) ১৯৩৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থা প্রতি বছর ৭৩ মিলিয়ন বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী আমেরিকানকে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সুবিধা প্রদান করে।
বাইডেন তাঁর ভাষণে এসএসএ-র পরিষেবা নিয়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে অনেকে তাদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারছেন না।” তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, “তারা আসলে কী করতে চাইছে?”
বাইডেন প্রশাসনের এই নীতির সমালোচনা করে অনেকে বলছেন, এর ফলে বয়স্ক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, যারা সাপ্লিমেন্টাল সিকিউরিটি ইনকাম (Supplemental Security Income) পান, তাদের অনেকেই এখন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, ডেমোক্র্যাট দলের কিছু সদস্য বাইডেনের এই ভাষণ নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, বাইডেনের এই ধরনের রাজনৈতিক অঙ্গনে পুনরায় প্রবেশ করা উচিত হয়নি।
তাঁদের আশঙ্কা, বাইডেনের বক্তব্য ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কারেন ফিনির মতে, অনেক ডেমোক্র্যাট মনে করেন, বাইডেনের এই উপস্থিতি ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অন্যান্য নীতির কারণে সৃষ্ট প্রতিকূলতা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল বেশ কম, মাত্র ৩৮ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাইডেনের এই ভাষণ দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তিনি এখনো প্রবীণ নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা