যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাইডেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন যে ইউক্রেনকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হতে পারে।
তিনি এই পদক্ষেপকে ‘আধুনিক যুগের তোষণনীতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেনের হিটলারকে খুশি করার নীতির সঙ্গে এর তুলনা করেন বাইডেন।
বিবিসি রেডিও ফোর-এর ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, “আমি বুঝি না, কীভাবে কেউ ভাবতে পারে যে একজন স্বৈরাচারী, একজন গুণ্ডা, যখন নিজের নয় এমন কিছু ভূখণ্ড নিতে চায়, তখন তাকে সেটি করতে দিলে সে শান্ত হবে।
আমি এটা বুঝতে পারি না।” এখানে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ইঙ্গিত করেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের আচরণ ছিল ‘আমেরিকার জন্য লজ্জাজনক’। তিনি ট্রাম্পের আমেরিকা উপসাগর, পানামা, গ্রিনল্যান্ড এবং কানাডা দখলের ইচ্ছার সমালোচনা করেন।
বাইডেন বলেন, “এখানে কী হচ্ছে? কোন প্রেসিডেন্ট এমন কথা বলেন? আমরা তো এমন নই। আমরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সুযোগের পক্ষে, দখলদারিত্বের পক্ষে নই।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, “হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি।
ইউরোপের অনেক নেতাই এখন দ্বিধায় আছেন। তারা ভাবছেন, এখন কী করা যায়? আমার জন্য সবচেয়ে ভালো পথ কী? আমি কি যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারি? তারা কি পাশে থাকবে?”
ট্রাম্প কি একজন প্রেসিডেন্টের চেয়ে রাজার মতো আচরণ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, “তিনি একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মতো আচরণ করছেন না।” বাইডেন আরও যোগ করেন, ইতিহাসের পাতায় ট্রাম্পের শাসনামল বিচার করা হবে।
তবে তিনি তার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য’ কিছু দেখেননি।
বাইডেন আরও জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতি তার উদ্বেগ আগের চেয়ে কম, কারণ তার মতে, রিপাবলিকান পার্টি এখন ট্রাম্পের আসল চেহারাটা বুঝতে পারছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বাইডেন বলেন, “আমার মনে হয়, এতে কিছু যায় আসে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এমন একটা সময়ে সরে দাঁড়িয়েছিলাম, যখন আমাদের একজন ভালো প্রার্থী ছিল এবং তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল।
আমি চেয়েছিলাম, আমরা যা শুরু করেছিলাম, তা সম্পন্ন করতে। কেউ ভাবেনি আমরা এত সফল হতে পারব, আমাদের এজেন্ডা এত ভালোভাবে এগিয়ে যাবে।
তাই, সরে আসাটা কঠিন ছিল। এটা কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিল।”
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত ছিলেন এবং মিত্র দেশগুলোকে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি রাশিয়ার উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য কাজ করেছেন।
বিদায়ের সময় তিনি ইউক্রেনকে দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা আরও বাড়ান।
বাইডেনের শাসনামলে, ইউক্রেনকে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা করা হয়েছে।
বিবিসির সঙ্গে এই কথোপকথন বাইডেনের ক্ষমতা ত্যাগের পর প্রথম সাক্ষাৎকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়। আগামী বৃহস্পতিবার এবিসি’র ‘দ্য ভিউ’ অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ক্ষমতা থেকে সরে আসার পর বাইডেন খুব একটা জনসম্মুখে আসেননি। তবে গত মাসে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের (Social Security Administration) পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন