পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেটাস্ট্যাটিক প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার পর বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে বাংলাদেশের পুরুষদের সচেতন হওয়াটা খুবই জরুরি।
প্রোস্টেট ক্যান্সার কী, এর লক্ষণগুলো কী এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো কী, তা জানা দরকার।
প্রোস্টেট হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গের একটি অংশ, যা মূত্রথলির নিচে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হলো বীর্যের জন্য তরল তৈরি করা।
যখন প্রোস্টেট কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে, তখন প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়। মেটাস্ট্যাটিক প্রোস্টেট ক্যান্সার হলো এমন এক অবস্থা, যখন ক্যান্সার কোষগুলো প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়, যেমন – হাড় বা লিম্ফ নোডগুলোতে।
সাধারণত, প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি, বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া
- কোমর, পিঠ বা শ্রোণী অঞ্চলে ব্যথা অনুভব করা
- দুর্বলতা এবং ওজন হ্রাস হওয়া ইত্যাদি।
প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ডাক্তাররা সাধারণত কিছু পরীক্ষার সাহায্য নেন। এর মধ্যে একটি হলো ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা (DRE)।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা আঙুল দিয়ে প্রোস্টেট গ্রন্থির আকার এবং কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা, তা পরীক্ষা করেন। এছাড়া, প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (PSA) পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে PSA-এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
PSA-এর উচ্চ মাত্রা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ইঙ্গিত দিতে পারে। ক্যান্সার নিশ্চিত করতে বায়োপসি করারও প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ক্যান্সারের পর্যায় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি বা হরমোন থেরাপির মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তবে মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এক্ষেত্রে সাধারণত হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপি বা অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, যেমন – সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা প্রয়োজন।
এছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষ করে যাদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস আছে। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বাংলাদেশের পুরুষদের জন্য প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। আপনার শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে, দেরি না করে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন