শিক্ষাখাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তারা মূলত ক্লাসরুমে চ্যাটবট-এর (chatbot) ব্যবহার বাড়াতে চাইছে।
সম্প্রতি, মাইক্রোসফট, ওপেনএআই (OpenAI) এবং অ্যানথ্রপিক (Anthropic)-এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলো আমেরিকান শিক্ষক ফেডারেশনকে (American Federation of Teachers) এআই প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করেছে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষকদের এআই ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
শিক্ষকদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, উন্নত বিশ্বে দ্রুতগতিতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তাই, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালাগুলোতে শিক্ষকদের এআই ব্যবহারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে, যেমন- কীভাবে এআই ব্যবহার করে পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করা যায়, পরীক্ষার মূল্যায়ন করা যায় এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর এই অর্থ বিনিয়োগ শিক্ষক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে যেমন শিক্ষকরা এআই-এর মাধ্যমে নতুন সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন, তেমনি তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয়ও কাজ করছে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষকই এআই-এর ব্যবহার সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, এই প্রযুক্তির কারণে কি শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে?
তবে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলো বলছে, তারা শিক্ষকদের পাশে থাকতে চায় এবং এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে চায়। মাইক্রোসফটের সিইও ব্র্যাড স্মিথ (Brad Smith) শিক্ষকদের মধ্যে এআই সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষকদের মধ্যে “সন্দেহ” থাকা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান শিক্ষক সংগঠন, আমেরিকান শিক্ষক ফেডারেশন (American Federation of Teachers) এবং ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন (National Education Association), উভয়ই এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করছে।
এই প্রশিক্ষণগুলোতে শিক্ষকদের জন্য এআই বিষয়ক বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষকরা তাদের অভিজ্ঞতা ও ধারণা অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই শিক্ষার জগতে দ্রুত প্রবেশ করছে, তবে এর প্রশিক্ষণ এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর এই বিনিয়োগ শিক্ষকদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
তবে, তারা এও বলছেন, শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে, এই অংশীদারিত্ব যেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হয়।
বর্তমানে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শিক্ষাখাতে এআই-এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে। উন্নত বিশ্বের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এআই-এর ব্যবহার কীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ফলপ্রসূ করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস