বিশ্বের বিখ্যাত ১০টি ভবনের অজানা, চাঞ্চল্যকর তথ্য!

বিশ্বের কিছু বিখ্যাত স্থাপত্য: অজানা কিছু তথ্য

স্থাপত্য এক বিশাল জগৎ। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের সৃষ্টিশীলতা আর কল্পনাবোধ দিয়ে তৈরি করেছে অসাধারণ সব স্থাপনা, যা আজও মানুষের মনে বিস্ময় জাগায়।

এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্বের কিছু অত্যন্ত পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যের কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরব, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।

আইফেল টাওয়ার: প্যারিসের এই বিখ্যাত টাওয়ারটির ডিজাইন করেন গুস্তাভ আইফেল। শোনা যায়, তিনি টাওয়ারের উপরে একটি ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেছিলেন, যেখানে তিনি থাকতেন।

এই অ্যাপার্টমেন্টে একটি পিয়ানো, কাঠের আলমারি ও আরামদায়ক আসবাব ছিল। প্যারিসের অনেক মানুষ তাকে এই অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া দেওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি।

১৯২৩ সালে তার মৃত্যুর পরে, জনসাধারণের জন্য অ্যাপার্টমেন্টটি উন্মুক্ত করা হয়নি। তবে ২০১৫ সালে এটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়।

এখন যারা আইফেল টাওয়ারের উপরে যান, তারা একটি জানালা দিয়ে সেই অ্যাপার্টমেন্টটি দেখতে পান।

তাজমহল: ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহল ভালোবাসার এক অমর প্রতীক। এই অসাধারণ স্থাপত্য তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২২ বছর, আর এতে ২০,০০০ এর বেশি শ্রমিক কাজ করেছিলেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে এক হাজারের বেশি হাতি নির্মাণ সামগ্রী বহনের কাজে সহায়তা করেছিল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রয়াত স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন।

তাজমহল বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য্যের অন্যতম।

এমপায়ার স্টেট বিল্ডিং: নিউ ইয়র্কের এই আকাশচুম্বী অট্টালিকাটি সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা স্থাপত্য। ২০১১ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ছবি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল।

১০২ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি নিউ ইয়র্কের অন্যতম উঁচু ভবন এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি উঁচু ভবনের মধ্যে একটি।

পিসার হেলানো টাওয়ার: ইতালির পিসার এই টাওয়ারটির কথা কে না জানে! তবে এটির হেলানো অবস্থার কারণ কি জানেন? আসলে, টাওয়ারটি তৈরির সময় এর ভিত্তি দুর্বল ছিল এবং মাটি স্থিতিশীল না থাকার কারণে এটি একদিকে হেলে যায়।

১১৭৩ সালে টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, এবং পাঁচ বছর পর থেকেই এটি হেলতে শুরু করে। প্রকৌশলীরা বহুবার এর হেলে যাওয়া রোধ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ২০০১ সালে একটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে টাওয়ারটিকে স্থিতিশীল করা হয়।

বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টাওয়ারটি আরও অন্তত ২০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে।

কলোসিয়াম: ইতালির এই প্রাচীন স্টেডিয়ামটি তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারে! বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কলোসিয়ামের কংক্রিট তৈরি করতে তাজা, গরম চুন এবং খুব পরিষ্কার নুড়ি পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল।

এর ফলে, কংক্রিটে ফাটল দেখা দিলে তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই জোড়া লেগে যায়।

বুর্জ খলিফা: দুবাইয়ের এই আকাশচুম্বী অট্টালিকাটির জানালা পরিষ্কার করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। ভবনটিতে প্রায় ২৪,০০০ এর বেশি জানালা রয়েছে।

সবচেয়ে উঁচু জানালাগুলো পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা কর্মীদের প্রায় ৬১০ মিটার উপরে নিয়ে যায়! ২০১০ সালে যখন এটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়, তখন এর জানালা পরিষ্কার করার খরচ ছিল ৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

দ্য শার্ড: লন্ডনের দ্য শার্ড এক অত্যাশ্চর্য আধুনিক স্থাপত্য। এই ভবনের নির্মাণে ব্যবহৃত ৯৫% নির্মাণ সামগ্রী পুনর্ব্যবহৃত করা হয়েছিল।

এটি একই আকারের অন্যান্য ভবনের তুলনায় প্রায় ৩০% কম শক্তি খরচ করে।

হোয়াইট হাউস: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

১৮১৪ সালে, ব্রিটিশ সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে এটিতে আগুন দেয়। এরপর ১৯২৯ সালে ক্রিসমাস পার্টির সময় এর ওয়েস্ট উইংয়ে আগুন লাগে।

এলিজাবেথ টাওয়ার: লন্ডনের এলিজাবেথ টাওয়ার, যা বিগ বেন নামেও পরিচিত, এর চূড়ায় একটি আলো রয়েছে।

এই আলোটি হল ‘আর্টন লাইট’। কথিত আছে, ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া এই আলোটি স্থাপন করতে বলেছিলেন, যাতে তিনি বাকিংহাম প্যালেস থেকে বুঝতে পারেন পার্লামেন্টের সদস্যরা রাতেও কাজ করছেন কিনা!

নটরডেম ক্যাথেড্রাল: প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রালে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্গান। এতে ৮,০০০ পাইপ, পাঁচটি কিবোর্ড এবং ১০৯টি স্টপ রয়েছে।

২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল, এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্যাথেড্রালটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এর অর্গানটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চার বছর পর, ডিসেম্বর ২০২৪-এ ক্যাথেড্রালটি পুনরায় খোলা হয় এবং অর্গানটি বাজানো হয়।

এগুলো বিশ্বের কিছু বিখ্যাত স্থাপত্যের অজানা কিছু দিক। স্থাপত্যগুলি শুধু নিছক নির্মাণশৈলী নয়, বরং মানুষের সৃষ্টিশীলতা, ইতিহাস আর সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *