বিলাসবহুল পণ্যের আসল রহস্য ফাঁস: দাম কেন এত?

খরচ বাড়ছে, বাড়ছে জৌলুস! বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে কেন এই অস্থিরতা?

বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল পণ্যের বাজার এক নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়ছে, তেমনই এই বাজারের বৃদ্ধি আগের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। বায়ার্ন কোম্পানির (Bain & Company) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এই বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে এক দশক আগে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ২৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, এই খাতে বৃদ্ধির হার বর্তমানে বেশ ধীর গতিতে চলছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মানুষ সঞ্চয় করতে শুরু করলে বিলাসবহুল পণ্যের বিক্রি বাড়ে। কিন্তু এখন ইউরোপে বিলাসবহুল পণ্যের দাম ২০১৯ সালের তুলনায় কমপক্ষে ৫২% বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি এখন অনেক ক্রেতার কাছেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

বিলাসবহুল পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, অনেক ব্র্যান্ড এখন তাদের পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া, কারুকার্য এবং ব্যবহৃত উপাদানের ওপর জোর দিচ্ছে। তারা তাদের কারুশিল্পের গল্প শোনাচ্ছে, যা তাদের পণ্যের বিশেষত্ব প্রমাণ করে। এর মাধ্যমে তারা ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি পণ্যের “বিলাসবহুল” তকমা পাওয়ার মাপকাঠি কী? এখন আর এই ধারণা পোশাক, ওয়াইন বা গাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উচ্চ মূল্যের যে কোনো পণ্য, যা গুণমানের প্রতিশ্রুতি দেয়, তা-ই এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ৭৬ হাজার টাকার একটি লোহার কড়াই অথবা ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার সুগন্ধী মোমবাতিও এখন বিলাসবহুল পণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের উৎপাদনে কারুশিল্পের গুরুত্ব এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে। ইতালীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ফেরাগামো (Ferragamo), তাদের একটি পণ্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা করার জন্য, একজন খ্যাতিমান কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে (Tanner Leatherstein) নিযুক্ত করেছে। এই ধরনের প্রচারণা ভোক্তাদের মধ্যে ব্র্যান্ডের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে সাহায্য করে।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে, এই বাজারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতালীয় কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক শোষণের অভিযোগের কারণে, আরমানি (Armani) এবং ডিওরের (Dior) মতো কিছু ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। ভ্যালেন্টিনো (Valentino)-র একটি ইউনিটের বিরুদ্ধে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ আসায়, সেটিকে এক বছরের জন্য বিচার বিভাগীয় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, অনেক ব্র্যান্ড এখন তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেরাই সরবরাহকারীদের অধিগ্রহণ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পণ্যের উচ্চমূল্য এবং শ্রমিক শোষণের মতো বিষয়গুলো ব্র্যান্ডগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মূল্যের ধারণা পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।

বিলাসবহুল পণ্যের বাজার এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে যেমন দাম বাড়ছে, তেমনই ক্রেতারা পণ্যের গুণমান এবং নৈতিকতার বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের কারুকার্য, ঐতিহ্য এবং উৎপাদনে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যাতে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা যায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিলাসবহুল পণ্যের বাজারের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের ফলে, আমাদের দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *