যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচলে অচলাবস্থা: সরকারি অচলাবস্থার কারণে কর্মী সংকটে বিমানবন্দরগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে অচলাবস্থার কারণে দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে ফ্লাইটগুলোতে বিলম্ব হচ্ছে এবং ভ্রমণকারীরা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দেশটির বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের (Air Traffic Controllers – ATC) বেতন বন্ধ থাকায় এই সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল থেকে এ পর্যন্ত পঞ্চাশটিরও বেশি কর্মী সংকটের খবর পাওয়া গেছে, যার ফলে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত ফ্লাইটগুলোতে বিলম্ব হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা জরুরি কর্মী হিসেবে বিবেচিত হলেও, বেতন পাচ্ছেন না।
এর ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং কাজে যোগ দিতে পারছেন না।
লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার কর্মীদের অভাবে কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের রেগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরেও কর্মী সংকটের কারণে ফ্লাইটগুলো নির্ধারিত সময়ের পরে ছেড়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ১ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন কেন্দ্রে অন্তত ২৬৪ বার কর্মী সংকটের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানিয়েছেন, কর্মীদের বেতন বন্ধ থাকায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ দিন ধরে চলা অচলাবস্থার সময়ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও টিএসএ (TSA) কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক এবং বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ চ্যাড মনিং সিএনএনকে জানিয়েছেন, কর্মীদের কাজের চাপ বাড়তে থাকায় এই সংকট আরও বাড়বে।
বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের মতে, কর্মীদের অভাবে ফ্লাইটগুলোতে বিলম্ব একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ, কর্মীরা অসুস্থ হলে অথবা ছুটিতে গেলে, যারা কাজ করছেন তাদের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব এসে পড়ে।
এর ফলে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কারণে ৬,০০০ এর বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, যার মধ্যে কর্মীদের অভাব এবং খারাপ আবহাওয়া অন্যতম।
আটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক যাত্রী জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির কারণে তিনি উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি শুধু সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে ভ্রমণ করছি।
যদি আমার বেতন বন্ধ থাকত, তাহলে আমার কাজ করতে খুব কষ্ট হতো। আমি আশা করি, কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
আরেক যাত্রী ডিলান কাজিন্স সরকারি অচলাবস্থা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, তাদের দ্রুত একটি সমাধানে আসা উচিত এবং সরকারের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা উচিত।
কারণ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো বাকি রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইটের যাত্রা।
উদাহরণস্বরূপ, আটলান্টা বিমানবন্দরে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ ফ্লাইট চলাচল করে। এই পরিস্থিতিতে, বিমানবন্দরের কর্মীদের অভাব দেখা দিলে তা শুধু যাত্রী নয়, বরং পুরো বিমান চলাচল ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশন (NATCA) এক বিবৃতিতে কর্মীদের সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে। তারা কর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে করে বিমান চলাচলে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন