যুক্তরাষ্ট্রে জীবন কাটানো নিয়ে যারা ভাবছেন, বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে কিছু জরুরি বিষয় বিবেচনা করা দরকার। বিশেষ করে, নতুন একটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বর্তমান বিশ্বে উন্নত জীবন ও ভালো সুযোগের খোঁজে অনেক মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, উন্নত জীবনযাত্রার প্রত্যাশা—এমন নানা কারণে মানুষ দেশান্তরী হতে চায়। সম্প্রতি, এমন একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেও। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন নাগরিক এখন দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আগ্রহী।
কিন্তু বিদেশযাত্রা মানেই সোনার হরিণ নয়। একটি নতুন সংস্কৃতিতে খাপ খাওয়ানো, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া—এগুলো বেশ কঠিন। এছাড়া, সেখানে কাজ করা, বসবাস করা এবং কর দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও জটিল। তাই তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, ভালোভাবে সবকিছু বিবেচনা করা উচিত।
প্রথমেই, কেন আপনি দেশ ছাড়তে চাচ্ছেন, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করুন। উন্নত জীবন, ভালো মানের শিক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা নাকি নতুন কোনো অভিজ্ঞতা—আপনার মূল উদ্দেশ্য কী? প্যারিসে বসবাস করা ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকানস রেসিডেন্ট ওভারসিজ’-এর প্রেসিডেন্ট ডরিস স্পিয়ার-এর মতে, শুধু একটি পেশা নয়, বরং আপনি কেমন মানুষ হতে চান, সেটিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতে চাইলে, কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার।
* **কর্মসংস্থান:** বিদেশে কাজ করতে হলে ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের ভিসার প্রয়োজন হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ ও কঠিন হতে পারে। অনেক দেশে, বিশেষ করে যে দেশের ভাষা আপনি জানেন না, সেখানকার সরকারি অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সময়সাপেক্ষ। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।
* **ট্যাক্স বা কর ব্যবস্থা:** যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে গেলেও, আপনি দেশটির নাগরিক হিসেবে ট্যাক্স দিতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়া, যে দেশে বসবাস করবেন, সেখানকার করও দিতে হবে। তাই কর সংক্রান্ত জটিলতাগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডাবল ট্যাক্সেশন ট্রিটি’ আছে, যা করের বোঝা কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে একজন ট্যাক্স বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
* **ভিসা এবং বসবাসের সুযোগ:** ডিজিটাল অথবা গোল্ডেন ভিসার মতো কিছু বিকল্পও রয়েছে। ডিজিটাল ভিসার মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করে বিভিন্ন দেশে বসবাস করা যায়। আর গোল্ডেন ভিসা হলো, কোনো দেশে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে বসবাসের সুযোগ পাওয়া। তবে ভিসাসংক্রান্ত নিয়মকানুন সব সময় পরিবর্তন হতে পারে।
* **আবাসন ও জীবনযাত্রার খরচ:** নতুন দেশে বসবাস শুরু করার আগে, সেখানকার জীবনযাত্রার খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। বাড়িভাড়া, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যখাতে কত খরচ হতে পারে, সে বিষয়ে একটি ধারণা তৈরি করতে পারেন।
* **ভাষা এবং সংস্কৃতি:** যে দেশে যেতে চাচ্ছেন, সেখানকার ভাষা জানাটা খুব জরুরি। ভাষা না জানলে, সেখানকার সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোনো দেশে যাওয়ার আগে সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে আসা। এতে সেখানকার সংস্কৃতি, আবহাওয়া এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়া, আপনি যে শহরে থাকতে চান, সেখানকার সুযোগ-সুবিধা কেমন, তা-ও যাচাই করা যায়।
সুতরাং, বিদেশ যাওয়ার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। আপনার জন্য সঠিক গন্তব্য খুঁজে বের করুন এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন