ঐশ্বর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক: বিলাসবহুল ট্রেনের অন্দরে!

ইউরোপের বিলাসবহুল ট্রেনে ভ্রমণ: এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

ইউরোপ ভ্রমণে যারা একটু ভিন্ন স্বাদ খুঁজে বেড়ান, তাদের জন্য বিলাসবহুল ট্রেনের যাত্রা হতে পারে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (Venice Simplon Orient Express) এবং লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (La Dolce Vita Orient Express) – এই দুটি ট্রেন তাদের যাত্রীদের জন্য নিয়ে আসে আড়ম্বরপূর্ণ ভ্রমণের সুযোগ। সম্প্রতি, এই ট্রেনগুলোতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু তথ্য জানা গেছে।

ঐতিহ্যপূর্ণ এই ট্রেনগুলো মূলত দুটি ভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস চালায় ‘বেলমন্ড’ (Belmond), যারা বিশ্বজুড়ে বিলাসবহুল ট্রেন ও পাঁচতারা হোটেল পরিচালনা করে। অন্যদিকে, লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর পরিচালনায় রয়েছে ফরাসি ‘অ্যাকর’ (Accor) গ্রুপ। দুটি ট্রেনেই ভ্রমণের খরচ বেশ বেশি, তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে এরা একে অপরের থেকে ভিন্ন।

ট্রেনের ডিজাইন এবং আবাসনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এ ১৯২০-এর দশকের জ্যাজ যুগের আভিজাত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। চকচকে কাঠের কাজ, সুন্দর কারুকার্য, আরামদায়ক কাপড় এবং ল্যালিক ও বাকারার তৈরি বাতি এই ট্রেনের বৈশিষ্ট্য। এখানে রেস্টুরেন্ট কার, বার, বুটিকসহ ৫৪টি কেবিন রয়েছে, যেখানে ১০৮ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারেন।

অন্যদিকে, লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর ডিজাইন ১৯৬০-এর দশকের ইতালীয় শৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত। এখানে রয়েছে রেস্তোরাঁ, বার এবং ৩১টি কেবিন, যেখানে ৬২ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারেন। এই ট্রেনের কেবিনগুলোতে একটি আরামদায়ক বিছানা, আলাদা সোফা এবং টেবিল ও চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে।

আবাসনের সুবিধার ক্ষেত্রেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর ঐতিহাসিক কেবিনগুলোতে সাধারণত শাওয়ারের ব্যবস্থা থাকে না, যেখানে লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর সব ধরনের কেবিনেই বাথরুম এবং শাওয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে।

খাবার এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে উভয় ট্রেনেই রয়েছে খ্যাতি সম্পন্ন শেফদের তৈরি বিশেষ মেনু। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর মেনু ডিজাইন করেন ফরাসি শেফ জঁ ইমবার্ট। অন্যদিকে, লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর মেনু তৈরি করেন জার্মান শেফ হাইনজ বেক।

ভ্রমণের সময় উভয় ট্রেনেই বারে লাইভ পরিবেশনার ব্যবস্থা থাকে। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর যাত্রীরা সাধারণত ১৯২০-এর দশকের পোশাক পরে এবং মার্টিনি অথবা শ্যাম্পেন উপভোগ করেন। লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এ পরিবেশটি কিছুটা হালকা থাকে, যেখানে শ্যাম্পেনের পরিবর্তে ফ্রাঙ্কিয়াকোর্টা পরিবেশন করা হয়।

ভ্রমণের সময়সূচী এবং গন্তব্যের ক্ষেত্রেও এই দুটি ট্রেনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভেনিস সিম্পলন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইউরোপের বিভিন্ন শহরে, যেমন – প্যারিস, ভেনিস, আমস্টারডাম, বুদাপেস্ট, ভিয়েনা এবং ইস্তাম্বুলে ভ্রমণ করে। অন্যদিকে, লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ইতালির আটটি রুটে এক, দুই বা তিন রাতের জন্য ভ্রমণ করায়। লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এর ভ্রমণে, যাত্রীরা বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে ঘুরতে যেতে পারেন।

খরচের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভেনিস থেকে প্যারিস পর্যন্ত এক রাতের জন্য ঐতিহাসিক কেবিনে ভ্রমণের খরচ শুরু হয় প্রায় ৪,৬৯২ ডলার থেকে। অন্যদিকে, লা ডলচে ভিটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এ একটি ডিলাক্স কেবিনের এক রাতের ভ্রমণের খরচ শুরু হয় ৩,৯১০ ডলার থেকে।

বিলাসবহুল ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা সম্ভবত অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। তবে যারা ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে চান, তাদের জন্য এই ট্রেনগুলো একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে।

এই প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *