ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরতেই: বিটকয়েনের দামে কি বিরাট পরিবর্তন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিটকয়েনের মূল্য কেমন বেড়েছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা বিষয়ক নীতিনির্ধারণী অবস্থানের কারণে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিটকয়েনের দামে এসেছে বড় উল্লম্ফন।

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ২৭ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিটকয়েন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। লাস ভেগাসে আয়োজিত এই সম্মেলনে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং উপদেষ্টাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভেন্স, ট্রাম্পের দুই ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক ট্রাম্প এবং শ্বেত হাউজের ক্রিপ্টো বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস। ট্রাম্প এবং তার পরিবারের ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে তার প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হওয়ার পর থেকে বিটকয়েনের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। নির্বাচনের দিন এর মূল্য ছিল প্রায় ৬৯,৫৩৯ মার্কিন ডলার।

বর্তমানে এটি ১১১,৯৭০ ডলারে পৌঁছেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতে বিটকয়েন সামান্য কমে গেলেও দ্রুতই তা আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।

ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্রিপ্টো-বান্ধব ব্যক্তিদের নিয়োগ এবং ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন।

উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC)-এর নতুন প্রধান হিসেবে পল অ্যাটকিনসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সরকার ‘কৌশলগত বিটকয়েন রিজার্ভ’ এবং ‘ডিজিটাল অ্যাসেট স্ট্যাকpile’ তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিগত কয়েক বছরে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার বেশ কিছু উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। বিশেষ করে, ২০২২ সালে বাহামাস-ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ FTX-এর বিপর্যয় এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে আঞ্চলিক ব্যাংকিং সংকট এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতিমালার কারণে বিনিয়োগকারীরা আবারও এই খাতে আগ্রহী হচ্ছেন।

বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সরবরাহ সীমিত হওয়ায় অনেক দেশ এটিকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রায় ১৯.৮৭ মিলিয়ন বিটকয়েন বাজারে রয়েছে এবং এর বাজার মূলধন প্রায় ২.১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যদি বিটকয়েন একটি দেশ হতো, তবে এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতির মধ্যে স্থান পেত।

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই তার নিজস্ব ‘$TRUMP’ নামের একটি মেম কয়েন চালু করেছেন। এই কয়েনটি তৈরি হয়েছে মূলত মজা করার উদ্দেশ্যে, তবে এর মাধ্যমে শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি এক ডিনারের জন্য বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১৪৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন।

ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যরাও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের কয়েন এবং একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠানে তাদের বিনিয়োগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্প এবং তার পরিবারের ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের কারণে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে। কারণ, তিনি একসময় ক্রিপ্টোর বিরোধিতা করলেও এখন এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত লাভের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *