কৃষ্ণাঙ্গ জীবন গুরুত্বপূর্ণ: বর্ণবাদ বিরোধী প্রতিবাদের স্মৃতিচিহ্ন

জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অঙ্কিত ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (Black Lives Matter) দেয়ালচিত্রগুলো আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড, ব্রিয়ানা টেইলর এবং আহমাদ আরবেরির মৃত্যুর পর বর্ণবাদ ও পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে সারা বিশ্বে।

সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেক শহরেই এই প্রতিবাদী দেয়ালচিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো, যা আজও বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, এবং নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এই দেয়ালচিত্রগুলো এখনো দেখা যায়। এইসব ছবিগুলো যেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, যা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান।

২০২০ সালের গ্রীষ্মে বিক্ষোভের পরে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শব্দটি কেবল একটি প্রতিবাদের শ্লোগান ছিল না, বরং এটি সেইসব রাস্তার উপরেও স্থান করে নিয়েছিল, যে পথে প্রতিবাদকারীরা হেঁটেছিলেন। এই দেয়ালচিত্রগুলো শিল্পী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের একত্রিত প্রয়াসের ফল।

উদাহরণস্বরূপ, আলাবামার হবসন সিটিতে, যা ছিল রাজ্যের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ-শাসিত শহর, সেখানকার বাসিন্দারা ‘ব্ল্যাক টাউনস ম্যাটার’ লিখে তাদের প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড এবং লস অ্যাঞ্জেলেসেও এই ধরনের দেয়ালচিত্র দেখা গেছে।

তবে, সব দেয়ালচিত্র সব সময় একইভাবে টিকে থাকেনি। কিছু দেয়ালচিত্র সময়ের সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা মুছে ফেলা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে, হোয়াইট হাউজের কাছে আঁকা একটি বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ দেয়ালচিত্র, যা প্রতিবাদকারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো, সেটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

যদিও এমনটা হয়েছে, তবুও এই দেয়ালচিত্রগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো প্রায় ১৫০টির মতো ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ দেয়ালচিত্র বিদ্যমান রয়েছে। শিকাগোর একজন শিল্প ইতিহাসবিদ লিন্ডসে ওয়েন এই দেয়ালচিত্রগুলোকে একটি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই দেয়ালচিত্রগুলো শুধু আমেরিকায় নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। এই দেয়ালচিত্রগুলো প্রমাণ করে যে, শিল্পকলা কীভাবে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *