শিরোনাম: ওয়াশিংটন ডিসি-তে ‘ব্ল্যাক লাইভস matter’ প্লাজার উত্থান ও পতন: বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি।
যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে যখন ফুঁসছিল বিক্ষোভের আগুন, সেই সময়ে ওয়াশিংটন ডিসি-র কেন্দ্রস্থলে গড়ে উঠেছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস matter’ প্লাজা। ২০২০ সালের মে মাসের শেষ দিকে, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের নৃশংস হত্যার পরে, সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
সেই প্রতিবাদের ঢেউ লাগে ওয়াশিংটন ডিসি-তেও। কয়েক দিনের মধ্যেই, শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউজার-এর উদ্যোগে, হোয়াইট হাউসের কাছে অবস্থিত একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস matter প্লাজা’।
এই প্লাজাটি ছিল শুধু একটি রাস্তার নামকরণ নয়, বরং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক শক্তিশালী প্রতীক। বিশাল অক্ষরে সেখানে লেখা হয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস matter’ – কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন মূল্যবান।
এই প্লাজা তৈরি হওয়ার পর, বহু মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে ফ্লয়েড সহ পুলিশের হাতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সম্মান জানিয়েছিলেন। শিল্পী কিয়োনা জোন্সের নেতৃত্বে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা এই প্লাজা তৈরি করেন, যা দ্রুত বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে।
তবে, এই প্লাজার যাত্রা মোটেও মসৃণ ছিল না। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্লাজার বিরোধিতা করেন এবং এটিকে ‘বিদ্বেষের প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এমনকি, রিপাবলিকান দলের কয়েকজন সদস্য এই প্লাজাটি ভেঙে ফেলার জন্য ফেডারেল ফান্ডের বিল তুলেছিলেন। রাজনৈতিক চাপ এবং বিতর্কের মধ্যে, অবশেষে প্লাজাটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্লাজা ভেঙে ফেলার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ এবং অধিকারকর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই একে তাঁদের প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হিসেবে দেখেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, এটি তাঁদের ইতিহাসকে মুছে ফেলার একটি অপচেষ্টা। প্লাজা ভেঙে ফেলার সময় অনেকে এর ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছু অংশ সংগ্রহ করে, যা তাঁদের প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
‘ব্ল্যাক লাইভস matter’ প্লাজা হয়তো এখন আর নেই, কিন্তু এর স্মৃতি আজও অম্লান। এই প্লাজা ছিল বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় – কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন সত্যিই মূল্যবান।
এটি শুধু আমেরিকার ঘটনা নয়, বরং সারা বিশ্বের সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এটি প্রমাণ করে, প্রতিবাদের ভাষা কখনও স্তব্ধ হয় না, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রূপ নেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন