দৃষ্টিহীন এক ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বের এক অসাধারণ গল্প
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ক্রিস্টোফার স্টিফেন্সের সঙ্গে পরিচয় হয় রজার বাটলার নামের এক ব্যক্তির। রজার ছিলেন দৃষ্টিহীন, তবে তাঁর ভেতরের মানুষটি ছিল অসাধারণ।
ক্রিস্টোফার নিয়মিত রজারের জন্য বই পড়ে শোনাতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
সেই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই ক্রিস্টোফার জানতে পারেন রজারের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা তাঁকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়।
রজার ছিলেন একজন গে মানুষ, এবং ১৯৬০ সালে, যখন যুক্তরাজ্যে সমকামিতা ছিল একটি অপরাধ, তিনি প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় ঘোষণা করেছিলেন।
সমাজের চোখে তখন যা ছিল ভয়ংকর, রজার সেই ভয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, গে সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
ক্রিস্টোফার জানান, আগে তিনি জানতেন, এই সময়ের গে পুরুষেরা নিজেদের গোপন রাখতেন, তাঁদের মধ্যে ছিল এক ধরনের লুকোচুরি। কিন্তু রজারের জীবন তাঁকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিল।
দৃষ্টিহীন হওয়ার পরেও রজার কীভাবে জীবনকে নতুন করে সাজিয়েছিলেন, সেই গল্প ক্রিস্টোফারের কাছে ছিল অনুপ্রেরণার।
ক্রিস্টোফার বুঝতে পারেন, রজার শুধু একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা, যিনি সমাজের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
তাঁর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে করতে ক্রিস্টোফার তাঁর জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হন।
কীভাবে তিনি তাঁর চারপাশকে অনুভব করতেন, কীভাবে প্রতিটি জিনিস গুছিয়ে রাখতেন, যাতে তাঁর চলাফেরায় কোনো অসুবিধা না হয়—এসবই ক্রিস্টোফারকে মুগ্ধ করত।
বন্ধুত্বের এই সময়ে ক্রিস্টোফার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারেন।
রজার ছিলেন গে অধিকার আন্দোলনের একজন অগ্রদূত।
তিনি চেয়েছিলেন সমাজের মানুষ সমকামীদের সম্পর্কে তাঁদের ভুল ধারণা পরিবর্তন করুক।
এই লক্ষ্যেই তিনি সবার সামনে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। ক্রিস্টোফার অনুভব করেন, রজারের এই সাহস তাঁকে পরবর্তীতে আরও ভালোভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে।
রজারের মৃত্যুর পর ক্রিস্টোফার তাঁর অনেক লেখা পান, যা তাঁর জীবনের এক গভীর দিক উন্মোচন করে।
সেই লেখাগুলো থেকে তিনি জানতে পারেন, কীভাবে রজার সমাজের চোখে আঙুল তুলে নিজের অধিকারের কথা বলেছিলেন।
ক্রিস্টোফার মনে করেন, আজও সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের গল্প বলতে চান, যদি তাঁদের কথা শোনার মতো কেউ থাকে।
এই গল্প শুধু একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির জীবন নিয়ে নয়, বরং এটি একটি বন্ধুত্বের গল্প, যা সমাজের চোখে আঙুল তুলে ধরে, ভালোবাসার পথে বাধা দূর করতে সাহস যোগায়।
এটি সেই সব মানুষের গল্প, যাঁরা সমাজের ভয়ে ভীত না হয়ে নিজেদের সত্যের পথে অবিচল থেকেছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian