মহাকাশে ‘নীল নদ’ : স্ট্রাউসের জন্মবার্ষিকীতে বিশেষ আয়োজন
বিশ্ববিখ্যাত সুরকার জোহান স্ট্রাউস দ্বিতীয়ের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর বিখ্যাত ‘নীল নদ’ (Blue Danube) ওয়াল্টজ সঙ্গীতটি মহাকাশে সম্প্রচারিত হতে চলেছে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এই বিশেষ আয়োজনটি করছে, যা সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এক আনন্দদায়ক ঘটনা। আগামী ৩১শে মে তারিখে এই সঙ্গীতানুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে, যেখানে ভিয়েনা সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’র পরিবেশনা থাকবে।
একই সাথে, ভিয়েনা, মাদ্রিদ এবং নিউ ইয়র্কে বিনামূল্যে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ থাকছে।
মহাকাশে সঙ্গীতের এই যাত্রা আসলে নক্ষত্রলোকের উদ্দেশ্যে এক বিশেষ বার্তা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সঙ্গীতের এই তরঙ্গ আলোর গতিতে ছুটে চলবে, যা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬৭০ মিলিয়ন মাইল বা ১ বিলিয়নের বেশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে।
এই সম্প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘নীল নদ’ প্রথমে পৌঁছে যাবে চাঁদের কাছে, যা ১.৫ সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
এরপরে, সাড়ে চার মিনিটের মধ্যে এটি মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে যাবে। বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করতে সময় লাগবে ৩৭ মিনিট এবং নেপচুনের কাছাকাছি পৌঁছাতে প্রায় চার ঘণ্টা।
প্রায় ২৩ ঘণ্টার মধ্যে এই সঙ্গীত সংকেত নাসা’র Voyager 1 মহাকাশযানের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে, যা বর্তমানে পৃথিবীর থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন মাইল দূরে, আন্তরগ্রহীয় স্থানে অবস্থান করছে।
অতীতেও নাসা (NASA) মহাকাশে সঙ্গীত প্রেরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
২০০৮ সালে, বিটলস-এর ‘Across the Universe’ গানটি সরাসরি মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এছাড়াও, গত বছর শিল্পী মিসি এলিয়টের ‘The Rain (Supa Dupa Fly)’ গানটি শুক্র গ্রহের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়।
এমনকি, একটি নাসার মার্স রোভারের মাধ্যমে উইলিয়াম-এর ‘Reach for the Stars’ গানটি পাঠানো হয়েছিল, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল জোসেফ অ্যাশবাখার বলেছেন, “সঙ্গীত সময় ও স্থানের মধ্যে এক বিশেষ যোগসূত্র তৈরি করে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা জোহান স্ট্রাউস দ্বিতীয়ের সাথে এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত এবং আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ মহাকাশ বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রীদের মনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে নাসা’র Voyager 1 এবং Voyager 2 মহাকাশযানে পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ ও ছবি সহ সঙ্গীতের একটি সংকলন পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু সেই সময়ে, জোহান স্ট্রাউসের ‘নীল নদ’-এর মতো বিখ্যাত সুর সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ভিয়েনার ট্যুরিস্ট বোর্ড এই ‘মহাজাগতিক ভুল’ সংশোধনের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস