নৌকা বাইচে চরম বিতর্ক! ‘শিক্ষাগত যোগ্যতার’ লড়াইয়ে উত্তাল, খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ কি?

ঐতিহ্যপূর্ণ অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ নৌকাবাইচ: অযোগ্যতা বিতর্ক ও ক্রীড়াঙ্গনে উত্তেজনা।

যুক্তরাজ্যের অন্যতম পুরনো ও ঐতিহ্যপূর্ণ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা (Boat Race) নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বিশ্বজুড়ে, যা খেলা প্রেমীদের কাছে এক বিশেষ স্থান তৈরি করেছে।

কিন্তু এবার এই ঐতিহ্যপূর্ণ ইভেন্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অযোগ্যতা সংক্রান্ত জটিলতা, যা মাঠের খেলা থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুকে অন্য দিকে নিয়ে গেছে।

আসন্ন রেসে অংশগ্রহণের যোগ্যতা নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে অক্সফোর্ড।

তাদের যুক্তি, শিক্ষকতার একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ (PGCE – Postgraduate Certificate in Education) সনদকে তারা কোনো “ডিগ্রি” হিসেবে গণ্য করতে রাজি নয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে কেমব্রিজের বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নারী রোয়ারও রয়েছেন, তাদের রেসে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।

নিয়ম অনুযায়ী, ১২ বছর পার হয়ে গেলে কোনো প্রতিযোগী স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান না। সেই হিসেবে প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ী টম ফোর্ডও আসন্ন রেসে অংশ নিতে পারবেন না।

কারণ, তিনি স্নাতক শেষ করার ১২ বছর পেরিয়ে এসেছেন।

বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন রেসের জন্য যোগ্য প্রতিযোগী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা একটি প্যানেল, যারা স্বতন্ত্রভাবে কাজ করেন, তারা কেমব্রিজের তিনজন শিক্ষার্থীর আবেদন নাকচ করে দেয়। এই শিক্ষার্থীরা হলেন—ম্যাথিউ হেইউড, যিনি একসময় অনূর্ধ্ব-২৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন এবং নারী দলের সদস্য মলি ফক্সেল ও কেট ক্রাউলি।

এই ঘটনার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা মনে করে, অক্সফোর্ডের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত ‘আপত্তিকর’ এবং ‘অখেলোয়াড়সুলভ’। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোট ক্লাবের চেয়ার, অলিম্পিক ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অ্যানামারেই ফেলপস-এর অভিযোগ, অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতেও রাজি হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে তিনি গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই বিস্মিত। বিশেষ করে, নারীদের বিভাগে অক্সফোর্ড দল বেশ কয়েক বছর ধরে ভালো ফল করতে পারছে না।

এমন পরিস্থিতিতে কেমব্রিজের খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়ার চেষ্টা তাদের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই বিতর্কের কারণে রেসের সঙ্গে যুক্ত স্পনসরশিপ চুক্তি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফরাসি ফ্যাশন হাউস চ্যানেল (Chanel) এই বছর নৌকাবাইচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যা তাদের খেলাধুলায় প্রথম স্পনসরশিপ।

এই চুক্তির অধীনে, রেসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চ্যানেল জে১২ বোট রেস’। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই ধরনের বিতর্ক তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কথা ভাবছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি পরামর্শও চেয়েছে।

সবকিছু বিবেচনায়, আসন্ন নৌকাবাইচ নিয়ে তৈরি হওয়া এই বিতর্ক খেলাপ্রেমীদের মধ্যে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সৃষ্ট এই জটিলতা কত দ্রুত নিরসন হয় এবং প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ কী দাঁড়ায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *