ববা ফেট: স্টার ওয়ার্স-এর জগৎ-এর এক রহস্যমানব
মহাকাশ যুদ্ধের এক বিশাল ক্যানভাসে, ববা ফেট (Boba Fett) নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত। এই চরিত্র, যিনি স্টার ওয়ার্স (Star Wars)-এর জগতে একজন কুখ্যাত এবং নিষ্ঠুর শিকারী হিসাবে পরিচিত, আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে গভীর স্থান করে আছেন। ববা ফেটের চরিত্রটি একইসাথে রহস্যে ঘেরা, যা তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
তাঁর জন্ম, তাঁর কর্মজীবন, এবং তাঁর জীবনের কিছু অজানা দিক নিয়ে আজকের আলোচনা।
ববা ফেটের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৯৭৮ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর, সান আনসেলমো কান্ট্রি ফেয়ার প্যারেডে। এর দু’মাস পরেই তিনি “স্টার ওয়ার্স হলিডে স্পেশাল”-এ একটি অ্যানিমেটেড চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন।
ববা ফেটের চরিত্রটি মূলত ডার্থ ভাদারের (Darth Vader) প্রাথমিক ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত। শুরুতে, ডার্থ ভাদারকে একজন বাউন্টি হান্টার (bounty hunter) হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে সেই ধারণা বাতিল করা হয় এবং ববাকে সেই চরিত্রে আনা হয়।
ববা ফেট ছিলেন বিখ্যাত ম্যান্ডোরিয়ান বাউন্টি হান্টার, জাঙ্গো ফেটের (Jango Fett) ক্লোন (clone)। কামিনো নামক একটি দূরবর্তী গ্রহে, ৩৩ বি.বি.ওয়াই (BBY)-তে গোপনে তৈরি হওয়া লক্ষ লক্ষ ক্লোনের মধ্যে ববা একজন।
জাঙ্গো ফেন্ট ববাকে তাঁর ডিএনএ-র (DNA) বিনিময়ে পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনোই ববাকে একজন ক্লোনের মতো দেখেননি। বরং, তিনি ববাকে নিজের ছেলের মতোই বড় করেছেন এবং শিকারী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধকৌশল ও জীবন ধারণের কৌশল শিখিয়েছেন।
অন্যান্য ক্লোন সৈন্যদের মতো ববার শরীরে কোনো পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। তাঁর একজন যমজ বোনও ছিল, ওমেগা। ওমেগা, জাঙ্গোর অন্য একটি অপরিবর্তিত ক্লোন ছিল, কিন্তু সে তার ভাইয়ের মতো শিকারীর পেশা বেছে নেয়নি, বরং নালা সে-এর (Nala Se) তত্ত্বাবধানে একজন চিকিৎসা সহকারী হিসেবে কাজ করত।
বাবারও তাঁর বোনের মতোই একটি কোডনাম ছিল, সেটি হলো আলফা। ২৩ বি.বি.ওয়াই-তে (BBY) অল্প বয়সে ববা, জাঙ্গোর সাথে প্রথম শিকার অভিযানে যোগ দেন। তাঁর জীবন মোড় নেয় যখন তিনি জানতে পারেন, জেডি মাস্টার মেস উইন্ডুর (Mace Windu) হাতে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে।
এরপর ববা প্রতিশোধ নিতে বহুবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হননি।
আসল স্টার ওয়ার্স ট্রিলজিতে (Star Wars Trilogy) ববাকে খুব কম কথা বলতে শোনা গেছে। আসলে, তিনি মাত্র চারটি বাক্য বলেছিলেন এবং পর্দায় তাঁর উপস্থিতি ছিল প্রায় সাড়ে ছয় মিনিটের মতো।
কম সংলাপ এবং কম স্ক্রিন টাইম (screen time) থাকা সত্ত্বেও ববা দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ২০০৮ সালের এম্পায়ার ম্যাগাজিনে (Empire magazine) তাঁকে সর্বকালের সেরা সিনেমার চরিত্রদের মধ্যে ৭৯তম স্থানে রাখা হয়েছিল।
“দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক” (The Empire Strikes Back) ছবিতে ববার আসল পোশাকে একটি ফায়ারথ্রোয়ার (flamethrower) যুক্ত ছিল। একবার, ববা ফেটের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা ডওয়েন ডানহাম (Dwayne Dunham) যখন এই বৈশিষ্ট্যটি পরীক্ষা করছিলেন, তখন তাঁর হাতে আগুন লেগে যায়, ফলে এই ডিজাইন বাতিল করা হয়।
জেরেমি বুলক (Jeremy Bulloch), যিনি আসল ট্রিলজিতে ববা ফেটের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাঁর সৎ ভাই, রবার্ট ওয়াটসের (Robert Watts) মাধ্যমে এই সুযোগটি পান, যিনি ছিলেন একজন সহযোগী প্রযোজক।
ববার পোশাক পরা ছিল বেশ কঠিন এবং জেরেমি বুলকের প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগত পোশাকটি পরতে।
নন-ক্যানন (non-canon) “লেজেন্ডস” (Legends) গল্পে, ববা ফেট ষোল বছর বয়সে সিন্টাস ভেলকে (Sintas Vel) বিয়ে করেন এবং তাঁদের একটি কন্যা হয়, যার নাম ছিল আইলিন ভেল।
এরপর ববাকে নির্বাসনে পাঠানো হয় এবং তিনি তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আইলিন পরে একজন বাউন্টি হান্টার হন এবং তিনি তাঁর বাবাকে খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন, যিনি তাঁর মতে, তাঁদের ত্যাগ করেছেন।
বাবার জীবনে বেশ কয়েকজন শিষ্য ছিল। “লেজেন্ডস” সিরিজে, তাঁর একজন শিষ্য ছিলেন জাইনা সোলো (Jaina Solo), যিনি ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হান সোলোর (Han Solo) কন্যা।
আসল চিত্রনাট্যে, ববাকে একটি বিশেষ সুপার ট্রুপার বাহিনীর অংশ হিসেবে দেখানোর কথা ছিল, কিন্তু বাজেট সংকটের কারণে সেই ধারণা বাতিল করা হয়। এর পরিবর্তে, তিনি একজন একক বাউন্টি হান্টার হন।
ববা দু’বার সারল্যাক-এর (Sarlacc) পেটে পড়েন – একবার ক্যাননে এবং একবার “লেজেন্ডস”-এ। সারল্যাকের শিকার হওয়া অসংখ্য মানুষের থেকে তিনি আলাদা ছিলেন, কারণ তিনি উভয়বারই সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
একটি বিরল ১৯৭৯ সালের কেনের (Kenner) রকেট-ফায়ারিং ববা ফেট অ্যাকশন ফিগার (action figure) ২০২৩ সালের ৮ই আগস্ট বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলনার রেকর্ড গড়েছিল।
খেলনাটির দাম ছিল ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সেই সময়ে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪ কোটি টাকার সমান ছিল।
ববা ফেট চরিত্রটি স্টার ওয়ার্স-এর দর্শকদের কাছে আজও অত্যন্ত প্রিয়। যদিও তিনি সব সময় ভালো মানুষ ছিলেন না, তাঁর আকর্ষণীয়তা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর রহস্যময়তা, দক্ষতা এবং কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিবোধ, তাঁকে এই কাল্পনিক জগতের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্রে পরিণত করেছে।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার