**বোয়িং-এর আকাশে অশনি সংকেত: শুল্কের কোপে মার্কিন রপ্তানি জায়ান্ট**
বিশ্বের বৃহত্তম বিমান নির্মাতা সংস্থা, বোয়িং-এর (Boeing) আকাশে এখন গভীর মেঘ। একদিকে নিরাপত্তা ত্রুটি ও উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা, অন্যদিকে যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য শুল্কের (tariff) জটিলতা। এর ফলে শুধু বোয়িং নয়, বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিমান পরিবহন খাতেও আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ রপ্তানিকারক সংস্থার উপর চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো যদি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বিমানের উৎপাদন খরচ কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে বোয়িং থেকে বিমান কেনা বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, যা টিকিটের দাম বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বোয়িং-এর অবস্থা আরও শোচনীয়। চীনের বাজারে বোয়িং-এর বিমান বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এমনকি, চীনের বিমানবন্দরে বোয়িং-এর তৈরি দুটি বিমান ফেরত পাঠানো হয়েছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির উপর চীন সরকার ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপ বোয়িং-এর জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হবে।
আশার কথা হলো, বোয়িং এখনও চীনের বিমান সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১৯৫টি বিমানের অর্ডার পেয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য দেশ থেকেও তাদের কাছে আরও ৬৭৮টি বিমানের অর্ডার রয়েছে। তবে বাণিজ্য শুল্কের কারণে যদি অন্যান্য দেশও মার্কিন বিমানের উপর শুল্ক বসায়, তাহলে এই অর্ডারগুলোও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটা ঘটলে, বোয়িং-এর ব্যবসায়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে।
বোয়িং শুধু বিমান বিক্রি করেই না, বরং এটি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও করে থাকে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এই কোম্পানির মাধ্যমে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ কর্মী। তাই, বোয়িং-এর সমস্যা মার্কিন অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলবে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
বোয়িং-এর বিমান তৈরির উপকরণ আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। তাদের বিমানের প্রায় ৮০ শতাংশ যন্ত্রাংশ আসে বিদেশি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে। উদাহরণস্বরূপ, বোয়িং-এর সবচেয়ে মূল্যবান বিমান ৭87 ড্রিমলাইনারের (787 Dreamliner) ডানা তৈরি হয় জাপানে। তাই, শুল্কের কারণে যন্ত্রাংশের দাম বাড়লে বিমানের উৎপাদন খরচও বাড়বে। এর ফলে বিমানের দাম আরও বাড়তে পারে, যা বিমান সংস্থাগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
বর্তমানে বোয়িং-এর আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ২০১৮ সালের পর থেকে তারা এখনো পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেনি। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাজারের অস্থিরতা— সবমিলিয়ে বোয়িংয়ের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে।
বোয়িংয়ের এই সংকট বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বোয়িং থেকে বিমান সরবরাহ পেতে দেরি হলে বা দাম বাড়লে, বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলোকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ফলে, আকাশপথে ভ্রমণের খরচও বেড়ে যেতে পারে। তাই, বোয়িংয়ের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন