বই মানুষের জীবনে আলো জ্বালায়, পথ দেখায়। বই শুধু তথ্য সরবরাহ করে না, বরং আমাদের ভেতরের জগৎকে প্রসারিত করে, নতুন চিন্তাভাবনার জন্ম দেয়।
সম্প্রতি, হাই ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন লেখক, শিল্পী ও চিন্তাবিদেরা তাঁদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে এমন কিছু বইয়ের কথা বলেছেন। আসুন, সেই বইগুলোর জগৎ-এ প্রবেশ করা যাক, যা হয়তো আমাদেরও নতুন পথে চলতে উৎসাহিত করবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে লেখা বইগুলো সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এই তালিকায় প্রথমেই আসে অ্যালেক্সি নাভালনির আত্মজীবনী ‘প্যাট্রিয়ট’।
প্রয়াত রুশ বিরোধী নেতা নাভালনি তাঁর এই বইয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা লিখেছেন। বইটি নির্বাচনে কারচুপি, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁর সংগ্রামের এক জ্বলন্ত দলিল।
তাঁর স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া-র মতে, বইটি প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য ডে’। এরিক ভুইয়ার্ডের লেখা এই বইটি জার্মানির নতুন শাসনের প্রতি শিল্পপতিদের আনুগত্যের এক বিস্ফোরক চিত্র তুলে ধরেছে।
এই বইয়ের ভাষ্য, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে।
সমাজ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে লেখা কয়েকটি বই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ডরিস লেসিংয়ের ‘দ্য গোল্ডেন নোটবুক’ নারীবাদী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক তুলে ধরে।
বইটিতে একজন লেখকের জীবনের বিভিন্ন দিক – ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সাহিত্যিক ও মনস্তাত্ত্বিক – নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। লেখক এলিফ শাফাক মনে করেন, বইটি নারী মুক্তি আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়নের চিত্র নিয়ে টনি মরিসনের লেখা ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’ বইটি ১৯৬০-৭০ দশকের গ্রামীণ আমেরিকার প্রেক্ষাপটে লেখা, যেখানে জাতিগত বিভেদ ও দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।
কেট মসে-র মতে, বইটি আমাদের সমাজের জটিলতা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
অর্থনৈতিক বৈষম্য ও নারীর শ্রমের মূল্যায়ন নিয়ে লেখা হয়েছে কাটরিন মার্সালের ‘হু কুকড অ্যাডাম স্মিথ’স ডিনার?’ বইটি।
লেখক লরা বেটস মনে করেন, বইটি অর্থনৈতিক তত্ত্বের চিরাচরিত ধারণাকে প্রশ্ন করে এবং নারীদের শ্রমের গুরুত্ব তুলে ধরে।
কিছু বই আছে যা ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে আরও গভীর করে তোলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এলিজাবেথ বোয়েনের ‘দ্য ডেথ অফ দ্য হার্ট’।
লেখক টেসা হেডলি মনে করেন, বইটি জীবনের গভীরতা এবং বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন অনুবাদক হিসেবে লিলিয়ানা লুঙ্গিনার জীবন নিয়ে লেখা ‘ওয়ার্ড ফর ওয়ার্ড’ বইটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইউলিয়া নাভালনায়া মনে করেন, বইটি তাঁর নিজের দেশের ইতিহাস জানতে সাহায্য করেছে।
চিন্তা ও মননের জগতকে সমৃদ্ধ করে এমন কিছু বইও রয়েছে। ড্যান আরিয়েরির ‘প্রিডিক্টেবলি ই র্যাশন্যাল’ বইটি আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে দেখতে শেখায়।
জোয়ান হ্যারিস-এর মতে, বইটি আমাদের যুক্তিবুদ্ধির বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বুঝতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, পরিবেশ এবং শান্তির পক্ষে লেখা সতীশ কুমারের আত্মজীবনী ‘নো ডেস্টিনেশন : অটোবায়োগ্রাফি অফ এ পিলগ্রিম’ বইটি শান্তি ও প্রকৃতির প্রতি লেখকের গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
বইয়ের জগৎ সীমাহীন।
এখানে প্রতিটি পাঠকের জন্য রয়েছে অনুপ্রেরণা, উপলব্ধির নতুন দিগন্ত। হাই ফেস্টিভ্যালের এই সুপারিশগুলো আমাদের সেই পথ খুলে দেয়, যেখানে আমরা নতুন কিছু খুঁজে নিতে পারি, যা হয়তো আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলবে।
আসুন, বই পড়ি, আলোকিত হই।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান