বোলিভিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের সমর্থকরা আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা নিশ্চিত করার দাবিতে দেশটির সুপ্রিম ইলেকটোরাল ট্রাইব্যুনালের (Supreme Electoral Tribunal) দিকে মিছিল করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এই ঘটনা দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানী লা পাজে (La Paz) মোরালেসের শত শত সমর্থক সমাবেত হয়ে মিছিল শুরু করেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোরালেসের প্রার্থিতা ফেরানোর জন্য কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
বিক্ষোভকারীরা “এভো মোরালেস ফিরে এসো” স্লোগান দিতে দিতে সুপ্রিম ইলেকটোরাল ট্রাইব্যুনালের দিকে এগিয়ে যান। মিছিলটি যখন আদালতের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এর পরেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরা পাল্টা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশ কমান্ডার হুয়ান রুসো (Juan Russo) জানান, সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য, একজন সাংবাদিক এবং একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
তবে বিক্ষোভকারীদের হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মোরালেস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। দেশটির সাংবিধানিক আদালত (Constitutional Court) সম্প্রতি এক রায়ে মোরালেসকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে।
আদালত জানায়, কোনো প্রেসিডেন্ট দুবারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। মোরালেস এর আগে তিনবার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মোরালেস তাঁর সমর্থকদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান। যদিও তিনি নিজে বিক্ষোভে উপস্থিত হননি। শোনা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে (Luis Arce), যিনি একসময় মোরালেসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, তিনিও আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। আর্সে’র দল, “মুভমেন্ট টুওয়ার্ডস সোশালিজম” (MAS) এরই মধ্যে অন্য একজনকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সমর্থন জানিয়েছে।
মোরালেস ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্পদ বিতরণে এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
মোরালেস একসময় টানা চতুর্থবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং এর ফলস্বরূপ তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বলিভিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রমাণ করে। মোরালেস নিজেও অতীতে আদালতের সমর্থন পেয়েছেন।
এখন তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি আইনি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন