ব্রাজিলের সাবেক রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর সমর্থনে রিও ডি জেনেইরোর কোপাকাবানা সৈকতে হাজারো মানুষের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়।
বিক্ষোভকারীরা তাদের নেতার প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি, গত বছরের ৮ই জানুয়ারির দাঙ্গায় জড়িতদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।
কোপাকাবানা সৈকতে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে আসা মানুষজন হলুদ ও সবুজ রঙের ব্রাজিলীয় ফুটবল দলের জার্সি পরে এসেছিলেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, যেখানে “এখনই ক্ষমা চাই” (Amnesty, now!) লেখা ছিল।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী, সমাবেশে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। যদিও বলসোনারোর মিত্ররা আশা করেছিলেন প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে।
২০২২ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হওয়ার পর, বলসোনারো ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি। এমনকি তার বিরুদ্ধে লুলাকে বিষ প্রয়োগ ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়েছে।
বলসোনারো অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেছেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলসোনারো বলেন, “কেউ এই গল্প বিশ্বাস করে না। তাদের (সরকারের) ষড়যন্ত্র যদি সফল না হওয়ার একমাত্র কারণ আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম।
আমি যদি এখানে থাকতাম, তাহলে হয়তো জেলে যেতাম, অথবা তারা আমাকে মেরে ফেলত। আমি তাদের জন্য সমস্যা হয়ে থাকব, জেলে থেকেও, আবার মরে গেলেও।”
উল্লেখ্য, এই সমাবেশের নয় দিন পরেই ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন বিচারপতির মধ্যে পাঁচজনের একটি প্যানেল সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সমাবেশের আগে, বলসোনারোর ছেলে সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তার সমর্থকদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “শত শত রাজনৈতিক বন্দী এবং নির্যাতিত মানুষের এখন আমাদের সকলের সমর্থন প্রয়োজন।”
গত বছরের ৮ই জানুয়ারির দাঙ্গায় বলসোনারোর সমর্থকরা সুপ্রিম কোর্ট, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এবং কংগ্রেস ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছিল।
প্রসিকিউটর-জেনারেল (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) পাওলো গোনেট, বলসোনারো এবং তার সঙ্গে জড়িত আরও ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।
তার মতে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এটি ছিল তাদের শেষ চেষ্টা।
রিও ডি জেনেইরোর স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক পাওলো হেনরিকে কাসিমিরো মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের অভিযোগ গ্রহণ করার আগে বলসোনারো নিজেকে এবং কারাগারে থাকা তার সমর্থকদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারলে, কংগ্রেস হয়তো তাকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও ক্ষমা করে দিতে পারে।” তবে, সমাবেশে লোকসমাগম কম হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে তার জনপ্রিয়তা কমেছে।
গেতুলিও ভারগাস ফাউন্ডেশনের আইন বিভাগের অধ্যাপক থিয়াগো বোটিনো বলেন, অভিযোগগুলো সম্ভবত গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, “একটি বিচার শুরু করার জন্য যা প্রয়োজন, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য তার চেয়ে ভিন্ন কিছু লাগে। যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।”
তিনি জব্দ করা নথি, সাক্ষীদের বক্তব্য এবং বিপুল পরিমাণ বার্তা বিনিময়ের কথা উল্লেখ করেন।
২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী কাসিয়ানে সুসা জানান, বলসোনারোর আইনি জটিলতা সত্ত্বেও তার আন্দোলনের যে শক্তি এখনো টিকে আছে, সেটি দেখানোর জন্য তিনি এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা এখানে এসেছি কারণ আমাদের এখনো আশা আছে, না হলে আমরা ঘরেই থাকতাম।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস