ছেড়ে আসার সাহস রাখুন: সম্পর্ক, অবসর ও নতুন অ্যালবাম নিয়ে বন ইভার

নতুন গানের জগৎ: অবসরের ইঙ্গিত আর ভালোবাসার গল্প নিয়ে ফিরছেন বন ইভার

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় শিল্পী জাস্টিন ভারনন, যিনি ‘বন ইভার’ নামেই পরিচিত, তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘সেবল, ফ্যাবল’ নিয়ে ফিরে এসেছেন।

তবে এবার তাঁর ফেরার ধরনটা একটু অন্যরকম। গান প্রকাশ এবং এর প্রচারণার ব্যাপারে তাঁর মনে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে।

এমনকি কনসার্ট করারও কোনো ইচ্ছে নেই তাঁর। শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকেই যেন নিজেকে আড়ালে রাখতে চেয়েছেন তিনি। এবার যেন সেই ইচ্ছের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হতে চলেছে।

২০০৮ সালে যখন বন ইভার পরিচিতি পেতে শুরু করেন, তখন থেকেই যেন লোকচক্ষুর অন্তরালে যেতে শুরু করেন জাস্টিন। উইসকনসিনের একটি শিকার কুটিরে বসে তৈরি করা তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘ফোর এমা, ফরএভার এগো’ তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়।

এরপর তাঁর গানের ধরনেও আসে পরিবর্তন, যা তাঁর শ্রোতাদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। এমনকি কানয়ে ওয়েস্ট এবং টেইলর সুইফটের মতো তারকারা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছেন।

নতুন অ্যালবাম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জাস্টিন জানান, এই গানগুলো তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি সবকিছু করতে রাজি। শুধু অ্যালবামই নয়, এর সঙ্গে থাকছে স্যালমন রঙের টি-শার্ট, স্মোকড স্যালমনের একটি বিশেষ সংস্করণ এবং একটি সুগন্ধীও।

নিজের শিল্পীসত্তাকে নতুনভাবে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুত তিনি।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর লন্ডনে বসে কথা বলার সময় ৪৩ বছর বয়সী জাস্টিন তাঁর অতীতের ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতার কথা জানান। বাস্কেটবল খেলার সময় পাওয়া পায়ের আঘাতের কারণে তিনি ‘ফুটি’ খুলে রেখেছিলেন।

নিজের শহর থেকে পাওয়া একটি নীল হুডি পরে বেশ সহজভাবেই তিনি তাঁর কথাগুলো বলছিলেন।

‘সেবল, ফ্যাবল’ অ্যালবামটি এমন একটি সময়কে তুলে ধরে, যখন জীবনে আসা গভীর অন্ধকার ধীরে ধীরে আলোয় পরিণত হয়।

গত বছর প্রকাশিত তিনটি গানের একটি ইপি (EP) ছিল ‘সেবল’-এর অংশ। এই গানগুলোতে হতাশা এবং কষ্টের কথাগুলো সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

জাস্টিন জানান, তিনি সবকিছু সহজভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। এরপর আসে নতুন ভালোবাসার আগমন, যা অ্যালবামের ‘ফ্যাবল’ অংশের মূল ভিত্তি।

এই অংশে, তিনি জিম-ই স্ট্যাক এবং ড্যানিয়েল হাইমের সঙ্গে কাজ করেছেন। গানের কথায় সহজ, তবে গভীর ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।

২০১৯ সালে লেখা ‘এভরিথিং ইজ পিসফুল লাভ’ গানটি এই অ্যালবামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গানটির একটি অংশে এমন কথা রয়েছে, যা যেন জীবনের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসকে প্রকাশ করে।

জাস্টিন জানান, তিনি এই অনুভূতিগুলো কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন।

অতীতের দিকে ফিরে তাকালে জাস্টিন তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেন। খ্যাতি পাওয়ার পর তিনি অনুভব করেন, যেন তাঁর বলার মতো নতুন কিছু নেই।

২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘২২, এ মিলিয়ন’ অ্যালবাম তৈরির সময় তিনি মানসিক উদ্বেগে ভুগেছিলেন, যে কারণে ইউরোপ সফর বাতিল করতে বাধ্য হন।

গানগুলো পরিবেশন করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে ‘আই, আই’ অ্যালবাম তৈরির মাধ্যমে তিনি কিছুটা স্বস্তি ফিরে পান।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় জাস্টিন তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।

আরো উইসকনসিনের জঙ্গলে ফিরে তিনি ‘থিংস বিহাইন্ড থিংস বিহাইন্ড থিংস’ গানটি লেখেন, যেখানে তিনি তাঁর ভেতরের কষ্টগুলো প্রকাশ করেছেন।

২০২২ সালে বন ইভার আবার কনসার্টে ফিরে আসেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আগের মতোই হতাশ হয়ে পড়েন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তাঁর কনসার্টের সরঞ্জাম বিক্রি করে দেন। এরপর ধূমপান ত্যাগ করার জন্য একটি বিশেষ প্রোগ্রামে অংশ নেন।

এই সময়ে তিনি উপলব্ধি করেন, জীবনের ভালো দিকগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

জাস্টিন তাঁর জীবনের এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, খ্যাতি তাঁকে অনেক সময় ‘খারাপ মানুষ’ বানিয়েছিল।

কানয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিখেছেন, কীভাবে ব্যস্ততার মাঝেও নিজের ভালো থাকাটা জরুরি। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও তিনি কথা বলেন।

‘অ্যাওয়ার্ডস সিজন’ গানে তিনি নতুন ভালোবাসার কথা বলেছেন।

এই সময়ে তিনি অনুভব করেন, তাঁর করা সবকিছু যেন সঠিক ছিল। তবে তিনি দ্রুতই বুঝতে পারেন, ভালোবাসার ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়াটা কতটা কঠিন।

জাস্টিন বলেন, তিনি এখন আর সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন না।

তাঁর স্বাস্থ্য ভালো আছে এবং তিনি অনেক বছর বাঁচতে চান। তিনি চান, তাঁর শ্রোতারা যেন ‘সেবল, ফ্যাবল’-এর মাধ্যমে জীবনের আনন্দ খুঁজে পান।

বব ডিলানের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর জাস্টিনের মনে হয়, তিনি যেন তাঁর আসল রূপ ফিরে পেয়েছেন। প্রচারণার এই এক মাস তাঁর জন্য ভালো ছিল।

তিনি বলেন, এই অ্যালবামটি তাঁর জন্য এক ধরনের থেরাপি। এটি যেন তাঁর জীবনের একটি মানচিত্র, যা তিনি তৈরি করেছেন এবং এর মাধ্যমে অন্যদেরও পথ দেখাতে চান।

সবশেষে, জাস্টিন বলেন, ‘সেবল, ফ্যাবল’ তৈরি করার মাধ্যমে তিনি ভালোবাসার প্রতি তাঁর গভীরতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *