টাকা জমিয়ে লাভবান হওয়ার সহজ উপায়: বন্ড নাকি সিডি?

টাকা থাকলে, তা আপনার জন্য কাজ করা উচিত। বিশেষ করে, মুদ্রাস্ফীতির এই বাজারে, আপনার সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখা এবং এর থেকে নিয়মিত আয় করাটা জরুরি।

এই লক্ষ্যে বন্ড অথবা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) -এর ‘ল্যাডারিং’ কৌশল বেশ কার্যকর হতে পারে। আসুন, এই কৌশলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

বন্ড ও এফডি-র ‘ল্যাডারিং’ কী?

‘ল্যাডারিং’ হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে আপনি বিভিন্ন মেয়াদের বন্ড বা ফিক্সড ডিপোজিটে (যেমন: ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর ইত্যাদি) বিনিয়োগ করেন। ধরা যাক, আপনার হাতে কিছু টাকা আছে এবং আপনি তা বিনিয়োগ করতে চান।

এই ক্ষেত্রে, আপনি যদি এক বছরের জন্য একটি ফিক্সড ডিপোজিট করেন, তাহলে এক বছর পর আপনি সুদসহ আপনার মূল টাকা ফেরত পাবেন। এখন, যদি আপনি এই টাকা পুনরায় বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে আপনি হয়তো ২ বছর মেয়াদী অন্য একটি স্কিমে টাকা রাখতে পারেন।

এভাবে বিভিন্ন মেয়াদের স্কিম তৈরি করাকে ‘ল্যাডারিং’ বলা হয়। এর মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন নিয়মিত আয়ের সুযোগ পান, তেমনি আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকিও কমে আসে।

এই কৌশল কখন কাজে লাগে?

  • মুদ্রাস্ফীতি থেকে বাঁচতে: যদি আপনার প্রধান উদ্দেশ্য হয় আপনার মূলধনকে সুরক্ষিত রাখা এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করা, তাহলে ‘ল্যাডারিং’ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
  • ঋণ পরিশোধে সহায়তা: আপনার যদি ক্রেডিট কার্ডের ঋণ থাকে, সেক্ষেত্রে বন্ড বা এফডি-র ‘ল্যাডারিং’ কৌশল ঋণ পরিশোধে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি বাড়ি বিক্রি করে ১ কোটি টাকা পান, তাহলে জরুরি অবস্থার জন্য কিছু টাকা রেখে বাকিটা ‘ল্যাডারিং’ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
  • নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সঞ্চয়: ধরুন, আপনি ৫ বছর পর একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান। এক্ষেত্রে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
  • নিয়মিত আয়ের জন্য: যারা অবসর গ্রহণ করেছেন, কিন্তু সরকারি বা অন্য কোনো পেনশন এখনো পাননি, তারা এই কৌশল ব্যবহার করে একটি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া, এই কৌশল ব্যবহার করে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীলতাও তৈরি করা যেতে পারে।

বিনিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:

  • সময়ের ধারণা: আপনার টাকার প্রয়োজন কতদিন পর, সেই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে হবে। যদি আপনি জরুরি ভিত্তিতে এই টাকা তুলতে চান, তাহলে মেয়াদপূর্তির আগে তা ভাঙতে গেলে জরিমানা হতে পারে। তাই, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগের সময়সীমা নির্বাচন করুন।
  • বন্ড নাকি এফডি?: বিনিয়োগের আগে, করের বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি। এফডি-র সুদ আয়করযোগ্য, তবে বন্ডের ক্ষেত্রে করের নিয়ম ভিন্ন হতে পারে। তাই, আপনার জন্য কোনটি লাভজনক, তা জেনে নেওয়া ভালো।
  • নিজেই পরিচালনা করবেন নাকি পরামর্শকের সাহায্য নেবেন?: আপনি যদি স্বল্প মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে হয়তো নিজেই এটি পরিচালনা করতে পারেন। তবে, দীর্ঘমেয়াদী এবং বেশি আয়ের জন্য একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া ভালো। বিশেষ করে, বন্ড মার্কেট সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে, ঝুঁকি এড়াতে পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘ল্যাডারিং’

বাংলাদেশে বন্ড ও এফডি-র ‘ল্যাডারিং’ কৌশল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সরকারি বন্ড, সঞ্চয়পত্র এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট স্কিমের মাধ্যমে আপনি এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া, বর্তমানে কিছু বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই ধরনের সুযোগ নিয়ে আসছে।

উপসংহার

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনা করা অপরিহার্য। তাই, বিনিয়োগের আগে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন এবং আপনার আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি করুন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *