চিঠির জাদু: ডাকযোগে আসা বন্ধুত্বের বার্তা!

বিশ্বজুড়ে হাতে লেখা চিঠি আদান-প্রদান এবং সৃজনশীল বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠা এক অনন্য সম্পর্ক : আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে সংগৃহীত।

ছোটবেলা থেকেই অনেকের শখ থাকে বন্ধু বানানোর। আর এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই বিশ্বে এমন কিছু মানুষের দেখা মেলে, যারা হাতে লেখা চিঠি, হাতে তৈরি করা বই এবং আরও নানা ধরনের জিনিসপত্রের আদান-প্রদান করে থাকেন।

আধুনিক ডিজিটাল যুগে যেখানে ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজের ছড়াছড়ি, সেখানে এই পুরোনো দিনের অভ্যাস যেন এক অন্যরকম আকর্ষণ সৃষ্টি করে। The Guardian-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ‘বিনিময়’ বা ‘সোয়াপিং’ (বিনিময়) সংস্কৃতি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

এই সোয়াপিং (বিনিময়) সংস্কৃতির মূল আকর্ষণ হল ফ্রেন্ডশিপ বুক (বন্ধুত্বপুস্তক)। এই বইগুলো হাতে তৈরি করা হয় এবং এর মধ্যে থাকে পছন্দের মানুষের নাম, ঠিকানা, রুচি এবং আরও অনেক ব্যক্তিগত তথ্য।

যারা এই বই তৈরি করেন, তারা একে অপরের সঙ্গে স্টিকার, লেবেল, স্ট্যাম্প এবং অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস বিনিময় করেন।

অস্ট্রেলিয়ার আনা রায়ান-পাঞ্চ নামের একজন লাইব্রেরিয়ান জানান, তিনি প্রায় ২০ জনের সঙ্গে এই ধরনের বিনিময় করেন। তার মতে, এই কাজটি মানসিক শান্তির পাশাপাশি সৃজনশীলতারও সুযোগ করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, “আমরা সাধারণত সবাই স্টেশনারি (লেখা ও হিসাবের সরঞ্জাম) ভালোবাসেন।

এই সংস্কৃতি কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। জানা যায়, আন্তর্জাতিক ইয়ুথ সার্ভিস (আইওয়াইএস) নামের একটি ফিনিশ কোম্পানি ১৯৫২ সালে তরুণদের মধ্যে এই ধরনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করত।

তারা সারা বিশ্ব থেকে সমবয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করত। এই কার্যক্রমের মাধ্যমেই ফ্রেন্ডশিপ বুকের ধারণা আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সোয়াপিংয়ের (বিনিময়) ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুনও রয়েছে। যেমন, কে কতগুলো স্টিকার নেবে বা দেবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হয়।

অনেক সময় এই ধরনের বিনিময় ফোরাম এবং ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমেও সংগঠিত হয়।

জার্মান গবেষক আঞ্জা লোবার্টের মতে, নব্বইয়ের দশকে টেক দ্যাট (Take That) ব্যান্ডের ভক্তদের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ বুকের ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করে।

তারা তাদের পছন্দের ব্যান্ড এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের ছবি বিনিময় করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করত।

এই সোয়াপিং (বিনিময়) সংস্কৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে আছে। যদিও ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে হাতে লেখা চিঠির প্রচলন কমে গেছে, তবুও পুরনো দিনের এই অভ্যাস এখনো অনেকের কাছে প্রিয়।

অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে তারা মানসিক শান্তি পান এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারেন।

সোয়াপিংয়ের (বিনিময়) সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের এই শখের কথা বলতে কিছুটা দ্বিধা বোধ করেন। তবে আনা রায়ান-পাঞ্চের মতো অনেকেই আছেন, যারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের তৈরি করা জিনিসপত্রের ছবি পোস্ট করতে ভালোবাসেন।

তাদের মতে, এর মাধ্যমে তারা অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন এবং তাদের কাজগুলো বিশ্বজুড়ে কত দূর পর্যন্ত যায়, তা দেখতে পারেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *