প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি, যা দেখলে গা ছমছম করে উঠবে! হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে আবিষ্কৃত হয়েছে এক বিরল প্রজাতির শুঁয়াপোকা, যারা নিজেদেরকে রক্ষার জন্য পোকামাকড়ের মৃতদেহ ব্যবহার করে।
এদের অদ্ভুত আচরণ এবং জীবনযাত্রা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য কৌতূহলের বিষয়। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা এই পোকাদের নিয়ে গবেষণা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন।
এই বিশেষ ধরনের শুঁয়াপোকা ‘হাইপোসমোমা’ (Hyposmocoma) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এরা আকারে খুবই ছোট, অনেকটা সাধারণ পিল বা বড়ির মতো।
তবে এদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এরা মৃত পোকামাকড়ের খোলস নিজেদের শরীরে গেঁথে এক ধরনের আচ্ছাদন তৈরি করে।
মাকড়সার পায়ের অংশ, উইপোকার ডানা, পিঁপড়ের মাথা – এমন বিচিত্র সব উপকরণ দিয়ে এরা নিজেদের শরীর সাজায়। দেখলে মনে হয়, যেন পোকামাকড়ের ধ্বংসস্তূপ!
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই শুঁয়াপোকাদের এমন অদ্ভুত আচরণের মূল কারণ হলো আত্মরক্ষা।
পোকামাকড়ের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে নিজেদের আচ্ছাদিত করে এরা শিকারী এবং অন্যান্য বিপদ থেকে বাঁচতে চায়। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ও’আহু (Oahu) অঞ্চলের একটি পাহাড়ের ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যেই এদের বসবাস।
সেখানের পরিবেশ এদের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিকাশে সাহায্য করেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই অ্যাট মানোয়ার (University of Hawaiʻi at Mānoa)-এর কীটতত্ত্ববিদ ড্যানিয়েল রুবিনফ (Daniel Rubinoff) এবং তাঁর সহকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই পোকাদের উপর গবেষণা চালাচ্ছেন।
তাঁদের মতে, খাদ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও এই পোকাদের বিশেষত্ব রয়েছে। এরা মৃত বা দুর্বল পোকামাকড় শিকার করে এবং তাদের দেহের অংশ নিজেদের আবরণে যুক্ত করে।
বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা গেছে, এই শুঁয়াপোকারা প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়েছে।
এদের জীবনযাত্রা, খাদ্যভ্যাস এবং আত্মরক্ষার কৌশল সত্যিই অসাধারণ। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই বিরল প্রজাতির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।
আবাসস্থল ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বহিরাগত প্রজাতির আক্রমণে এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
গবেষকরা মনে করেন, এই শুঁয়াপোকাদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
কারণ, প্রকৃতির এই বিস্ময়কর সৃষ্টি যদি হারিয়ে যায়, তবে তা হবে জীববৈচিত্র্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এই বিশেষ পরিবেশেও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের বসবাস রয়েছে। সেখানকার জীববৈচিত্র্যও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংরক্ষণের দাবি রাখে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক