বদলে যাওয়া দুনিয়ায় বনি রাইটের কণ্ঠ: আজও কেন এত প্রাসঙ্গিক?

বনি রাইট: সঙ্গীতের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

সুরের জগৎ-এ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের কণ্ঠ আর গিটারের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছেন বনি রাইট। ব্লুজ, ফোক, এবং রক ঘরানার গানের এই শিল্পী শুধু একজন সঙ্গীতশিল্পীই নন, বরং তিনি একজন সমাজকর্মীও বটে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর সঙ্গীত জীবন, শিল্পী জীবন, এবং সামাজিক কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন।

ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি বনির আগ্রহ ছিল।

তাঁর বাবা ছিলেন ব্রডওয়ের একজন জনপ্রিয় শিল্পী জন রাইট।

বাবার কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি সঙ্গীতের পথে যাত্রা শুরু করেন।

কৈশোরে বনি সামাজিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, তবে সঙ্গীত ছিল তাঁর কাছে নিছকই একটা শখ।

পরবর্তীতে বন্ধুদের মাধ্যমে ব্লুজ শিল্পীদের সাথে পরিচিত হন এবং তাঁদের কনসার্টে গান করার সুযোগ পান।

বনি জানান, সেই সময় ব্লুজ গিটারে মেয়েদের তেমন একটা দেখা যেত না, তাই তাঁর গান দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি প্রথম নিজস্ব কনসার্ট করেন এবং এর মাধ্যমেই যেন তাঁর শিল্পী জীবনের শুরু হয়।

বনি রাইটের সঙ্গীত জীবনে বিভিন্ন কিংবদন্তী শিল্পীর প্রভাব রয়েছে।

তাঁর উপর জন লি হুকার, জন প্রাইন, এবং লোওয়েল জর্জের মতো শিল্পীদের গভীর প্রভাব ছিল।

জন লি হুকারের সাথে তাঁর বন্ধুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “জন লি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা, আবার তিনি ছিলেন আমার বন্ধু।”

বনি আরো জানান, “আই কান্ট মেক ইউ লাভ মি” গানটি তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সৃষ্টি, যা মানুষকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

সঙ্গীতের বাইরে বনি সবসময়ই সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন।

তিনি পরিবেশ রক্ষা, মানবাধিকার, এবং আদিবাসী আমেরিকানদের অধিকারের মতো বিষয়গুলোতে সমর্থন জুগিয়েছেন।

তাঁর মতে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের কাজ করা উচিত, শুধুমাত্র কথা বলা বা অনুদান দেওয়াই যথেষ্ট নয়।

বনি রাইটের সঙ্গীত জীবনে বিভিন্ন সময়ে অর্জিত হয়েছে সম্মাননা।

তাঁর “জাস্ট লাইক দ্যাট” গানটি ২০২৩ সালে গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

এই গানটি অঙ্গদান এবং প্রতিস্থাপন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করেছে।

বনি জানান, এই গানের মাধ্যমে তিনি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন এমন অনেক পরিবারকে চিঠি পেয়েছেন, যা তাঁর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বনি রাইট অনেক কিংবদন্তী শিল্পীর সাথে কাজ করেছেন।

তাঁদের মধ্যে রে চার্লস, বিবি কিং, অ্যালিসিয়া কিস এবং শেরিল ক্রোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, “আমি সবাইকে ভালোবাসলেও, বাবা জন রাইটের সাথে গান করাটা ছিল আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত।”

বনি রাইট এখনো নতুন শিল্পীদের গান শোনেন এবং তাঁদের কাজকে উৎসাহিত করেন।

সম্প্রতি তিনি কানাডার ব্যান্ড ‘ব্রোস ল্যানড্রেথ’, এবং শিল্পী লোলা ইয়ংয়ের কাজের প্রশংসা করেছেন।

এছাড়াও জেসন ইসবেল, জ্যানেল মোনায়ে, বিয়ন্সে, কেনড্রিক লামার-এর মতো শিল্পীদের কাজের প্রতিও তিনি মুগ্ধ।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে জীবনের শক্তি ও অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বনি বলেন, “আমি আমার দীর্ঘদিনের সুস্থ জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ।

প্রতিদিন ব্যায়াম করি এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি।

এছাড়াও, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা আমাকে আনন্দ দেয়।”

বনি রাইটের মতে, একজন শিল্পী হিসেবে টিকে থাকতে হলে গানের কথা এবং সুরের প্রতি যত্নবান হতে হয়, কারণ শ্রোতাদের কাছে গানের গভীরতা পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি।

বনি রাইটের সুরেলা কণ্ঠ এবং গভীর কথার গান আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *