পুরুষের শাসনকে বুড়ো আঙুল! ক্ষমতা বাড়াতে বনবো স্ত্রীরা কেন জোট বাঁধে?

বোনোবো, যা আমাদের খুব কাছের এক প্রজাতি শিম্পাঞ্জির মতোই, তাদের সমাজে নারী সদস্যদের ক্ষমতা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি থাকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এর মূল কারণ হলো—পুরুষদের মোকাবিলায় নারীদের জোটবদ্ধতা।

আফ্রিকার কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে (Democratic Republic of the Congo) বসবাসকারী বোনোবোদের নিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে চলা এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি *কমিউনিকেশনস বায়োলজি* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিদ মার্টিন সুরবেকের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তাঁরা দেখেছেন, নারী বোনোবোরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকে এবং এর মাধ্যমে তারা পুরুষদের থেকে নিজেদের রক্ষা করে। এই জোটগুলো তাদের সমাজে প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের জোটবদ্ধ আচরণের প্রায় ৮৫ শতাংশই পুরুষদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোনো কোনো বোনোবো সমাজে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবশালী। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সমাজে নারীরা পুরুষদের থেকে বেশি র‍্যাঙ্ক অর্জন করে। সুরবেক বলেন, “আমরা এমন একটি বিষয় খুঁজে পেয়েছি যা সবাই জানে—একসঙ্গে কাজ করলে, আপনারা আরও সফল হবেন এবং ক্ষমতা অর্জন করবেন।”

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী লরা সিমোন লুইস, যিনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না, তিনি এই গবেষণাকে “একটি চিত্তাকর্ষক ডেটা সেট” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, “এই ডেটা আমাদের নিকটতম আত্মীয়, শিম্পাঞ্জিদের মতো বোনোবোদের ক্ষমতা অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।”

গবেষণায় পর্যবেক্ষণ করা ছয়টি বোনোবো সম্প্রদায়ের মধ্যে নারী সহযোগিতা এবং আধিপত্যের ভিন্নতা দেখা গেছে। সুরবেক জানান, “নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই ধরনের ভিন্নতা দেখা যায়, যা দল গঠনের কারণে হয়ে থাকে।”

গবেষকরা দেখেছেন, নারীরা যখন দলবদ্ধ হয়, তখন তারা পুরুষদের সঙ্গে সংঘাতে জেতে এবং তাদের র‍্যাঙ্কিংও বাড়ে। মজার বিষয় হলো, পুরুষ সদস্যরাও মাঝে মাঝে নারীদের দলে যোগ দেয়, তবে তারা নেতৃত্ব দেয় না।

বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন কারণে নারী জোট গঠিত হতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ওবাম্বা অঞ্চলে পুরুষদের দ্বারা বয়স্ক নারীদের প্রতি আগ্রাসী আচরণের পর নারীরা জোটবদ্ধ হয়।

আবার, অন্য তিনটি সম্প্রদায়ে, সন্তানদের ওপর পুরুষদের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় জোট গঠিত হয়।

যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটির প্রাইমেটবিদ এবং তুলনামূলক মনোবিজ্ঞানী জান্না ক্লে এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বোনোবো সম্প্রদায়ে নারী জোট এবং তাদের ক্ষমতার মধ্যে যে ভিন্নতা দেখা যায়, তা খুবই আকর্ষণীয়। এটি আমাদের কাছের আত্মীয়দের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং দেখায় যে, তাদের আচরণে অনেক সূক্ষ্মতা এবং ভিন্নতা রয়েছে।”

যদিও কোনো প্রাণী নিয়ে করা গবেষণা মানুষের সমাজের জটিল বিষয়গুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তবুও বোনোবো এবং শিম্পাঞ্জিরা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।

লুইসের মতে, “নারীরা প্রায়ই পুরুষদের সহিংসতার শিকার হন। এই গবেষণা থেকে জানা যায়, নারীরা কীভাবে জোট গঠন করে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।”

সুরবেকও মনে করেন, এই গবেষণা থেকে মানুষের জন্য কিছু শেখার আছে। তিনি বলেন, “এটি প্রমাণ করে যে পুরুষদের আধিপত্য এবং পিতৃতন্ত্র (patriarchy) অনিবার্য নয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বানর এবং মানুষ তাদের আচরণে খুবই উদ্ভাবনী ও নমনীয়। আমার মনে হয়, এটি আমাদের কিছুটা হলেও আশা যোগায়।”

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *