২০ বছরে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড: ওয়াটজকের চোখে খেলোয়াড় বিক্রি, দেউলিয়া হওয়ার গল্প!

বরুশিয়া ডর্টমুন্ড: দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে সাফল্যের শিখরে, ২০ বছরের জার্নি।

জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের (Borussia Dortmund) প্রধান নির্বাহী হিসেবে হান্স-জোয়াকিম ভাৎজকের (Hans-Joachim Watzke) ২০ বছরের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ক্লাবটিকে আর্থিক সংকট থেকে টেনে তুলে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত, এই দীর্ঘ সময়ে তার নেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং অভিজ্ঞতার কথা সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে।

২০০০ দশকের শুরুতে, ক্লাবটি যখন প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে, তখন ভাৎজকের নেতৃত্বে সংকট মোকাবিলার পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৫ সালের ১৪ মার্চ, ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দরে একটি সভায় ঋণদাতাদের রাজি করানো হয়, যার ফলে ক্লাবটি রক্ষা পায়। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর, ভাৎজকে ক্লাবটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।

জার্মান ফুটবলে বায়ার্ন মিউনিখের (Bayern Munich) প্রতাপের যুগেও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড নিজেদের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সময়ে ক্লাবটি দুটি বুন্দেসলিগা (Bundesliga) শিরোপা, তিনটি জার্মান কাপ এবং দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেছে। ইয়ুর্গেন ক্লপের (Jürgen Klopp) অধীনে ক্লাবটির এই সাফল্য আসে। তবে, মাঠের ভেতরের কিছু হতাশাজনক ঘটনা এবং মাঠের বাইরের প্রতিকূলতাও তাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে।

“গত ২০ বছরে, আমরা প্রায় সবকিছুই সঠিক পথে করেছি,” – এমনটাই মনে করেন ভাৎজকে।

খেলোয়াড় কেনাবেচার মাধ্যমে ক্লাবটির আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। জুড বেলিংহামের (Jude Bellingham) রিয়াল মাদ্রিদে (Real Madrid) যাওয়া ছিল এর একটি উদাহরণ। খেলোয়াড় তৈরি এবং তাদের ভালো দামে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ডর্টমুন্ডের একটি সুনাম রয়েছে, যেমন – রবার্ট লেভান্ডোভস্কি (Robert Lewandowski), ইকে গুন্ডোয়ান (Ilkay Gündogan), পিয়েরে-এমেরিক আউবামেয়াং (Pierre-Emerick Aubameyang), উসমান ডেম্বেলে (Ousmane Dembélé), আর্লিং হালান্ড (Erling Haaland) এবং জেডন সানচো (Jadon Sancho)।

তবে, ভাৎজকে মনে করেন, খেলোয়াড় বিক্রি তাদের মূল লক্ষ্য নয়, বরং সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তারা। বায়ার্ন মিউনিখের মতো আর্থিক সামর্থ্য থাকলে, খেলোয়াড় ধরে রাখা আরও সহজ হতো।

কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাৎজকে সাধারণত অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের ওপর বেশি আস্থা রেখেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – এডিন টেরজিক (Edin Terzic), যিনি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সমর্থক এবং এরপর স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করা নুরি শাহিন (Nuri Sahin)। এই ধরনের নিয়োগ নিয়ে মাঝে মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

২০১৬ সালে আরবি লাইপজিগ (RB Leipzig) বুন্দেসলিগায় উন্নীত হওয়ার পর, জার্মান ফুটবলের ‘৫০+১’ নিয়ম নিয়ে ভাৎজকে তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এই নিয়ম অনুযায়ী, ক্লাবের ভোটিং শেয়ারের ৫১ শতাংশ ক্লাবের সদস্যদের হাতে থাকতে হয়। এর ফলে, জার্মান ফুটবলে সমর্থকদের অংশগ্রহণ এবং ক্লাবের ঐতিহ্য বজায় থাকে।

ভাৎজকে মনে করেন, জার্মান ফুটবলের সাফল্যের পেছনে এই নিয়মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি, অস্ত্র প্রস্তুতকারক রাইনমেটালের (Rheinmetall) সঙ্গে ক্লাবের স্পন্সরশিপ চুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে, তিনি মনে করেন, সদস্যদের স্বার্থের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধার দিকেও নজর রাখতে হয়।

বর্তমানে, ভাৎজকে উয়েফার (UEFA) নির্বাহী কমিটিতে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি ফুটবল অঙ্গনে তার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে চান।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *