বোমা হামলায় বেঁচে ফেরা: বাবার হাত ধরে ম্যারাথন দৌড়ে ফিরলেন মেয়ে!

বোস্টন ম্যারাথন: এক বোমা হামলার স্মৃতি, পিতৃত্বের সাহস আর কন্যার ঘুরে দাঁড়ানো।

২০১৩ সালের ১৫ই এপ্রিল, বোস্টন ম্যারাথন দৌড়ের দিনে এক বিভীষিকাময় ঘটনার সাক্ষী ছিল পুরো বিশ্ব। ফিনিশিং লাইনের কাছে বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল চারপাশ, যা কেড়ে নিয়েছিল অনেকের জীবন।

সেই মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ইসাবেলা জিতো, যিনি তখন ছিলেন মাত্র নয় বছরের এক শিশু। তাঁর বাবা, জেমি জিতো, দৌড় শেষ করার জন্য লাইনের দিকে এগিয়ে আসছিলেন, আর তখনই ঘটে সেই ভয়ংকর বিস্ফোরণ।

বোমার শব্দে প্রথমে সবাই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ইসাবেলার মা, দ্রুত মেয়ে এবং তাঁর ছোট বোনকে জড়িয়ে ধরেন এবং জনাকীর্ণ স্থানটি থেকে দ্রুত সরিয়ে নেন। চারিদিকে তখন আহত মানুষের আর্তনাদ, আর চরম বিশৃঙ্খলা।

সৌভাগ্যবশত জিতো পরিবার তেমন কোনো গুরুতর আঘাত পাননি, তবে সেই দিনের স্মৃতি আজও তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।

বোমা হামলার পর কেটে গেছে দীর্ঘ ১২ বছর। সময়ের সাথে সাথে শোককে শক্তিতে পরিণত করে, ইসাবেলা এবং তাঁর বাবা আবারও ফিরে এসেছেন বোস্টন ম্যারাথনে।

এবার তাঁদের লক্ষ্য ছিল, অতীতের সেই ভয়াবহ স্মৃতিকে জয় করা এবং সমাজের চোখে নিজেদের নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করা। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, আঘাত যতই গভীর হোক না কেন, মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

২০২৫ সালের ২১শে এপ্রিল, ইসাবেলা এবং তাঁর বাবা, দুজনেই বোস্টন ম্যারাথনে অংশ নেন। বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁরা এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন।

২১ বছর বয়সী ইসাবেলা, যিনি বর্তমানে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী, জানিয়েছেন, “আমি এই দৌড়টি করতে চেয়েছিলাম, যাতে প্রমাণ করা যায় যে কঠিন পরিস্থিতিও মোকাবেলা করা সম্ভব। আমরা কোনো আঘাতের কাছে হার মানতে পারি না।”

পুরো ম্যারাথন জুড়েই ইসাবেলা তাঁর বাবার সঙ্গে দৌড়েছেন। শুরুতে তাঁর একটু ভয় লাগছিল, কিন্তু বাবার সাহচর্য তাঁর জন্য সহায়ক ছিল।

দৌড়ের সময় তাঁরা দুজনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। ফিনিশিং লাইনের কাছে আসার পর, অতীতের স্মৃতিগুলো যেন তাঁদের চোখে জল এনে দেয়।

ইসাবেলা বলেন, “১২ বছর আগে আমরা দুজনে মিলে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর আজ আমরা তা পূরণ করলাম।”

ফিনিশিং লাইন অতিক্রম করার পর, ইসাবেলা পুরোনো সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমি জানি এই আঘাত আমাকে ভেঙে দিয়েছিল, কিন্তু আমি নিজেকে ভাঙতে দিইনি। আমি ফিরে এসেছি, এবং সেই শোককে জয় করতে পেরেছি।”

বাবা ও মেয়ের এই অসাধারণ জয়যাত্রা শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং এটি সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা, যা প্রমাণ করে—সংকল্প থাকলে, যেকোনো বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *