আমাযনে বিশাল হুমকি! বন ধ্বংসের অনুমতি দিল ব্রাজিলের এই রাজ্য!

**ব্রাজিলের আমাজনে বনভূমি ধ্বংসের দায়ে অভিযুক্তদের ক্ষমা, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা**

ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত কয়েকশ’ জনের বেশি গবাদি পশু খামারিকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির রনডোনিয়া রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্যটির আইনপ্রণেতারা একটি নতুন আইন পাস করেছেন, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই আইনের ফলে বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে অবৈধভাবে পশুচারণ ভূমি তৈরি করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি খারিজ হয়ে যাবে।

গত ২৮শে এপ্রিল পাস হওয়া এই আইনটি অবিলম্বে কার্যকর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই আইন বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে উৎপাদিত পশু কিনেছিল এমন কসাইখানাগুলিরও সুবিধা করবে। আগে জ্যাসি-পারানা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে গবাদি পশু পালন করা হতো, নতুন এই আইনের মাধ্যমে সেই এলাকাটিকে কার্যত বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, “এলাকাটি দখল ও ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত সকল জরিমানা, অভিযোগ এবং অন্যান্য প্রশাসনিক শাস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করা হলো, যার কোনো আইনি বা আর্থিক প্রভাব থাকবে না।”

ক্ষমা পাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্বের বৃহত্তম মাংস প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা জেবিএস এসএ (JBS SA)। জানা গেছে, আগামী জুন মাসে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (NYSE) তাদের শেয়ার ছাড়ার কথা রয়েছে। যদিও, ব্রাজিলের ফেডারেল প্রসিকিউশন সার্ভিসের ২০২৩ সালের একটি নিরীক্ষা অনুসারে, রনডোনিয়ার জেবিএস-এর ক্রয় করা গরুর মাংসের ১২ শতাংশ অবৈধভাবে বনভূমি ধ্বংস করে তৈরি করা এলাকা থেকে এসেছে।

ক্ষমার বিনিময়ে, গবাদি পশু খামারিদের রনডোনিয়ার পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে। এর ফলে তাদের বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করতে হবে এবং এলাকার কিছু অংশে পুনরায় বনসৃজনের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। যদিও এই আইন তাদের সরকারি জমি ব্যবহারের অধিকার দেয় না, তবে ৩০ বছরের জন্য তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এছাড়াও, ব্রাজিলের সংরক্ষিত অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও, তারা পশু বিক্রি করতে পারবে। রাজ্য প্রাণী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ১৬ হাজার গবাদি পশু চারণ করছে।

স্থানীয় একটি সংস্থার সমন্বয়ক ওয়েলিংটন লাম্বারগিনি এই আইনকে ‘অবমাননাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “এই আইনটি যদি অসাংবিধানিক ঘোষণা না করা হয়, তবে এটি ভূমি দখলের শিকার হওয়া সকল সংরক্ষিত অঞ্চলের সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এটি একটি বার্তা পাঠায় যে এই ধরনের অপরাধকে সহ্য করা হবে এবং অবশেষে তা বৈধতা পাবে।”

আইনটির প্রণেতা রাজ্যের আইনপ্রণেতা লুইস ডু হসপিটাল, রাজ্য সংসদের সভাপতি অ্যালেক্স রেডানো এবং জেবিএস কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে অবৈধভাবে ব্যবহৃত জমিকে বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়া আমাজনে বনভূমি ধ্বংসের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভূমি দখলকারীরা সাধারণত এই আশায় বনভূমি ধ্বংস করে যে, কোনো না কোনোভাবে তাদের এই কাজ বৈধতা পাবে। এক্ষেত্রে তারা সাধারণত পশুচারণের জন্য বনভূমি ধ্বংস করে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রম হিসেবে দেখানো হয়।

অতীতে, রনডোনিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, রাজ্য প্রসিকিউটরের কার্যালয় এবং পরিবেশ সংস্থা জ্যাসি-পারানা সংরক্ষিত এলাকার ক্ষতি করার জন্য কয়েকশ’ গবাদি পশু খামারি এবং চারটি কসাইখানার বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলা করেছিল, যেখানে ব্যাপকহারে গবাদি পশু পালন নিষিদ্ধ ছিল। জরিমানা ও মামলার পরিমাণ ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে রাজ্যের ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বলে অনুমান করা হয়। চিহ্নিত ৭৭৮ জন ভূমি দখলকারীর মধ্যে অনেকেই বিচারের আওতায় আসেনি। যদিও কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তবে আইনি ফাঁকফোকরের কারণে তাদের অনেকেই শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়েছে।

রাজ্য প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা নতুন আইনের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বিবেচনা করছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, রাজ্যের অ্যাটর্নি জেবিএস এবং আরও তিনটি কসাইখানার বিরুদ্ধে জ্যাসি-পারানাতে উৎপাদিত গরু কেনার জন্য মামলা করেন। কয়েক মাস পরে, দুটি কসাইখানা – ডিসট্রিবিওই এবং ফ্রিগন – এবং তিনজন গবাদি পশু খামারিকে পরিবেশগত ক্ষতির জন্য ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, কোনো কোম্পানিই এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

জেবিএস-এর বিরুদ্ধে বর্তমানে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাদের একটিতে, কোম্পানি যুক্তি দিয়েছে যে তাদের একটি পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি রয়েছে, যা শুধুমাত্র রনডোনিয়াতেই ২০,০০০-এর বেশি খামারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। জেবিএস আরও দাবি করেছে যে, এই মামলাটি মূলত মাত্র ৭৩টি গরুর ক্রয় সংক্রান্ত, যা রাজ্যে তাদের মোট ক্রয়ের ০.০০০০৬%

কোম্পানির মতে, ১২ বছর আগে সংঘটিত এই লেনদেনে গরুর খামারি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিল, কারণ তিনি জ্যাসি-পারানা রিজার্ভের বাইরের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবহার করে বিক্রিটিকে বৈধ দেখিয়েছিলেন। পরে ওই খামারিকে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিক্রয় থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই মামলার অস্তিত্ব – এমনকি এটি যদি সফল নাও হয় – জেবিএস এবং এর মাধ্যমে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে, যেখানে কোম্পানি জাতীয় জিডিপির প্রায় ২.১% অবদান রাখে।”

সংস্থাটি আরও জানায়, তারা ১লা জানুয়ারি, ২০২৬ সাল থেকে শুধুমাত্র তাদের স্বচ্ছ লাইভস্টক প্ল্যাটফর্মে নথিভুক্ত উৎপাদকদের কাছ থেকে গরু কিনবে, যা খামারিদের তাদের সরবরাহকারীদের সম্পর্কে তথ্য নথিভুক্ত করতে সহায়তা করবে। একইসাথে, তাদের জেবিএস-এর সামাজিক-পরিবেশগত সম্মতি মানদণ্ডও মেনে চলতে হবে।

গত মাসে, মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে জেবিএস-এর তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *