হেলিকপ্টার প্যাডে স্পিনিং! ব্রাজিলের আকাশে নতুন ট্রেন্ড!

আকাশপথে স্বাস্থ্যচর্চা: সাও পাওলোর হেলিপ্যাডে স্পিনিং ক্লাসের অভিনবত্ব

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হেলিকপ্টার বহর রয়েছে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে। আর এবার সেই শহরের হেলিপ্যাডগুলো নতুন রূপে পরিচিতি পাচ্ছে, যেখানে নিয়মিতভাবে বসছে আকর্ষণীয় স্পিনিং ক্লাস।

প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষের এই শহরে এখন শরীরচর্চার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যা আগে অন্দরমহলেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে যখন সবাই ঘরবন্দী, তখন ফিটনেস প্রশিক্ষক রদ্রিগো গুজম্যান-এর মাথায় আসে নতুন কিছু করার। প্রথমে তিনি স্কেটিং রিঙ্ক, সার্কাস এবং একটি পোষা প্রাণীর দোকানে শরীরচর্চার ব্যবস্থা করেন।

এরপরই তার চিন্তা আসে হেলিপ্যাডের কথা। ২০২১ সাল থেকে, তিনি সাতটি ভিন্ন হেলিপ্যাডে স্পিনিং ক্লাস পরিচালনা করছেন, যেখান থেকে পুরো শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।

গুজম্যান জানান, “নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি আমরা। যারা ভালো থাকতে চান, প্রকৃতির বাতাস গায়ে লাগাতে চান, সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা।” সম্প্রতি সাও পাওলোর একটি হোটেলে হেলিপ্যাডে ক্লাস করার পর তিনি এই কথা বলেন।

সাও পাওলো শহরে পাঁচ শতাধিক নিবন্ধিত হেলিকপ্টার রয়েছে, যা ব্যক্তিগত এবং সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, প্রতিদিন প্রায় ৭০০ বার এই শহরে হেলিকপ্টার ওড়ে।

এই শহরের অনেক হেলিপ্যাড অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে, যেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং সুন্দর দৃশ্য বিদ্যমান। বর্তমানে এখানে ৩০টির বেশি হেলিপ্যাড স্পিনিং ক্লাসের জন্য ব্যবহারের উপযোগী।

সাধারণত, ব্রাজিলের উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ক্লাসগুলো ৫০ মিনিটের জন্য হয়। প্রতিটি ক্লাসের টিকিটের মূল্য প্রায় ২00 ব্রাজিলীয় রিয়েল (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪,০০০ টাকা)। চাহিদা প্রচুর, তবে সবার জন্য জায়গা পাওয়া যায় না।

গুজম্যানের পরিচালনায় মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য একটি স্পিনিং ইভেন্টের জন্য ইতিমধ্যে ২,০০০ জনের বেশি মানুষ অপেক্ষা করছেন, কারণ সেখানে মাত্র ৩৬০টি বাইক উপলব্ধ।

প্রতিটি ইভেন্ট আয়োজন করতে তার প্রায় ৫০,০০০ রিয়েল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা) খরচ হয়, যেখানে প্রশিক্ষক, ডিজে এবং প্রযোজকসহ অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ফ্রান্সের একটি ক্রীড়া সামগ্রীর ব্র্যান্ডের স্থানীয় অফিসের ব্যবস্থাপক কারিনা কনরাডো বলেন, “আমি সাও পাওলোর রাস্তায় সাইকেল চালাই।

প্রতি সপ্তাহে ৪০-৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিই। হেলিপ্যাডের উপরে দাঁড়িয়ে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করাটা অসাধারণ।”

সাও পাওলো ভিত্তিক কোম্পানি স্পিন’ন সোলও হেলিপ্যাডে ক্লাস পরিচালনা করছে। তাদের কিছু ক্লাস হয় অভিজাত এলাকা ভিলা অলিম্পিয়াতে, যেখানে উঁচু ভবনগুলো রাতের বেলা আলো ঝলমলে হয়ে এক দারুণ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

কোম্পানিটি গত শুক্রবার শহরের প্রধান সড়ক অ্যাভিনিডা পাউলিস্তায় একটি শপিং মলের হেলিপ্যাডে অনেককে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এই সড়কটি সাও পাওলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে প্রায়ই বড় ধরনের উৎসব ও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়।

এই রাস্তা থেকেই সাও পাওলোর ৭০০টি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে।

স্পিন’ন সোলের প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল নাসের এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা এখানে কার্ডিও ব্যায়ামের একটি আশ্রয় তৈরি করছি; যা গতিশীলতার মধ্যে এক ধরনের ধ্যান।”

ফিটনেস প্ল্যাটফর্ম একাডেমিয়া ফোগেতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেলিও বেলচিওরের মতে, হেলিপ্যাডে ব্যায়াম করতে যারা আসে, তাদের ইনডোরে ব্যায়ামকারীদের মতোই চেষ্টা ও ঘাম ঝরাতে হয়।

তবে, জানালাবিহীন ঘর থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেকের জন্য ভালো ফল দেয়।

বেলচিওর আরও বলেন, “বন্ধুদের সাথে, সুন্দর দৃশ্যের উপরে, চমৎকার গান শুনতে শুনতে স্পিনিং করলে আপনি আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনকে আরও দীর্ঘ করতে পারে।”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *