চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিওয়াইডি’র বিরুদ্ধে ব্রাজিলে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির কৌঁসুলিরা এই চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে শ্রমিক পাচারের অভিযোগে মামলা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিওয়াইডি এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত দুটি ঠিকাদার সংস্থা শ্রমিকদের ‘দাসত্বের সমতুল্য’ পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য করেছে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ব্রাজিলের শ্রম বিষয়ক কৌঁসুলিরা এক বিবৃতিতে জানান, বিওয়াইডি এবং চায়না জিনজিয়াং কনস্ট্রাকশন ব্রাজিল ও টেকমন্টা ইকুইপমেন্টস ইন্টেলিজেন্টস নামক দুটি ঠিকাদার সংস্থার থেকে তারা ২৫৭ মিলিয়ন রিয়েল (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩২ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন।
কৌঁসুলিদের অভিযোগ, এই তিনটি কোম্পানি বাখিয়া রাজ্যের কামাকারি শহরে বিওয়াইডি’র একটি কারখানা তৈরির জন্য চীনা শ্রমিকদের পাচার করেছে। সেখানে শ্রমিকদের চরম মানবেতর পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য করা হতো।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “গত ডিসেম্বরে ২২০ জন চীনা শ্রমিককে দাসত্বের সমতুল্য পরিস্থিতিতে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা আন্তর্জাতিক মানব পাচারের শিকার।” প্রত্যেক শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার রিয়েল জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন কৌঁসুলিরা।
এই মামলার সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুলিশের এক অভিযানে। ওই সময় জিনজিয়াং থেকে ১৬৩ জন এবং টেকমন্টা থেকে ৫৭ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।
কৌঁসুলিরা বলছেন, শ্রমিকদের ব্রাজিলে আনা হয়েছিল তাদের কাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ভিসা দিয়ে। এছাড়াও, শ্রমিকদের মজুরির ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে রাখা হতো এবং চুক্তি বাতিল করতেও বেশি খরচ হতো। এমনকি কিছু শ্রমিকের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা সহজে কর্মস্থল ত্যাগ করতে না পারে।
মামলার বিবরণে শ্রমিকদের শোচনীয় জীবনযাত্রার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত বিছানা ও শৌচাগারের অভাব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ৩১ জন মানুষের জন্য মাত্র একটি টয়লেট ছিল, যে কারণে শ্রমিকদের ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরুর আগে গোসল করতে হতো।
বিওয়াইডি’র জন্য চীন হলো সবচেয়ে বড় বাজার। তবে চীনের বাইরে ব্রাজিলই তাদের প্রধান বাজার। যদিও বিওয়াইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। তারা এই মামলার জবাব আদালতে দেবে।
ডিসেম্বরে কোম্পানির এক মুখপাত্র জানান, খারাপ কাজের পরিবেশ নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো চীন এবং চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অপপ্রচার’।
তবে ব্রাজিলের শ্রম বিষয়ক কৌঁসুলি দাবি করেছেন, তাঁদের এই মামলা দৃঢ় প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। উপ-শ্রম বিষয়ক কৌঁসুলি ফ্যাবিও লেয়াল এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শ্রমিকেরা সবাই চীনে ফিরে গিয়েছেন এবং মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো অর্থ পেলে, তা সেখানেই পাবেন। ব্রাজিলের কোম্পানিগুলো এর প্রমাণ দেবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা