স্তন হারানোর পর: কঠিন লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করলেন লেখিকা

স্তন নিয়ে এক নারীর জীবনযুদ্ধ: ক্যান্সার আর শরীরের প্রতিচ্ছবি। জীবন আর শরীরের প্রতিচ্ছবি নিয়ে এক মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন জ্যাঁ হান্না এডেলস্টাইন।

স্তন নিয়ে তার ব্যক্তিগত এই অনুভূতির কথা তুলে ধরেছেন, যা কৈশোর থেকে শুরু করে জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে অবশেষে স্তন অপসারণের মধ্য দিয়ে নতুন এক উপলব্ধিতে পৌঁছায়।

ছোটবেলায় এডেলস্টাইন তার শরীরের গঠন নিয়ে সচেতন ছিলেন। পশ্চিমা সমাজে নারীর শরীর, বিশেষ করে স্তন, কীভাবে আকাঙ্ক্ষা, কৌতুক এবং উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখা হয়, সে সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন।

বন্ধুদের আড্ডায়, সিনেমায় কিংবা জনপ্রিয় ম্যাগাজিনে নারীদের স্তন নিয়ে আলোচনা ছিল নিয়মিত ঘটনা। কৈশোরে স্তন যখন বাড়তে শুরু করে, তখন তিনি নিজেকে আড়াল করতে চেষ্টা করতেন।

কারণ সমাজের চোখে তিনি ছিলেন ভিন্ন। পড়াশোনা এবং বন্ধুদের মাঝেও তিনি নিজের শরীর নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমানোর পর এডেলস্টাইন কিছুটা স্বাধীনতা অনুভব করেন। বন্ধুদের সাথে নাইটক্লাবে যাওয়া এবং সেখানে বয়স্ক পুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া অপ্রত্যাশিত প্রস্তাবগুলো তাকে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে।

যদিও এই সময়ে তিনি স্তনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুরু করেন, তবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সবসময় পীড়া দিত।

কর্মজীবনে প্রবেশের পর, এডেলস্টাইন সাংবাদিকতা এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তার কাছে স্পষ্ট ছিল।

বিভিন্ন সময়ে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, যা তাকে হতাশ করেছে।

মা হওয়ার পর, স্তন তার কাছে নতুন অর্থ নিয়ে আসে। মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে সন্তানের প্রতিপালন করতে গিয়ে তিনি শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হন।

স্তন তখন শুধু শরীরের অংশ ছিল না, বরং সন্তানের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে।

কিন্তু জীবনের এক কঠিন মোড়ে, ৪১ বছর বয়সে এডেলস্টাইন জানতে পারেন যে তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তিনি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে তার দুটি স্তনই অপসারণ করা হয়।

অস্ত্রোপচারের আগে, তিনি তার স্তনগুলোর সাথে কাটানো সময়ের কথা স্মরণ করেন। অস্ত্রোপচারের পর, শরীরে নতুন রূপ আসলেও তিনি তার পুরনো শরীরের জন্য মন খারাপ করতেন।

এডেলস্টাইন এর এই গল্প শুধু একজন নারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই নয়, বরং সমাজের চোখে নারীর শরীরের প্রতিচ্ছবি এবং ক্যান্সার-এর মতো কঠিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই গল্পে শরীরের প্রতিচ্ছবি, শরীরের সাথে সম্পর্ক, এবং নিজের শরীরকে ভালোবাসার এক নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, স্তন ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশেও এর প্রকোপ বাড়ছে।

তাই, সময় মতো রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *