শ্বাস-প্রশ্বাস: কিভাবে এটি আপনার শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে পারে।
দিনের শুরু থেকে রাতের ঘুম পর্যন্ত, শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা হয়তো সবসময় খেয়াল করি না, কিন্তু এই শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের শরীর ও মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
উদ্বেগমুক্ত জীবন, ভালো ঘুম এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলি কিভাবে সাহায্য করতে পারে, সেই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস (deep breathing) শুধু মানসিক শান্তির জন্য নয়, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। যখন আমরা গভীরভাবে শ্বাস নিই, তখন আমাদের শরীরে “ভেগাস নার্ভ” সক্রিয় হয়।
এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সংযোগ স্থাপন করে এবং হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে তোলে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরেও পরিবর্তন আনতে পারে। যখন আমরা ধীরে ধীরে শ্বাস নিই, তখন ফুসফুস এবং রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা সামান্য বাড়ে।
এটিকে অনেকে খারাপ মনে করলেও, এটি আসলে ভালো। কারণ, কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে, যা মস্তিষ্কে এবং হৃদপিণ্ডে আরও বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়ক।
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও অবসাদ কমাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল খুবই কার্যকর। ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন মেমোরিয়াল হাসপাতালের পালমোনারি ও স্লিপ মেডিসিনের চিকিৎসক ড. রাজ দাশগুপ্তের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাস যত ধীর হবে, এই পদ্ধতির শান্তিদায়ক প্রভাব তত বেশি অনুভূত হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ডায়াফ্রামাটিক শ্বাস-প্রশ্বাস (Diaphragmatic breathing): এটি “পেটের শ্বাস-প্রশ্বাস” নামেও পরিচিত। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় পেট ফুলানো এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পেট সংকুচিত করার মাধ্যমে এই কৌশলটি করা হয়। দিনে কয়েকবার ৫-১০ মিনিটের জন্য এটি অনুশীলন করা যেতে পারে।
- বক্স শ্বাস-প্রশ্বাস (Box breathing): এই পদ্ধতিতে, শ্বাস নেওয়া, শ্বাস ধরে রাখা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় সমান সময় গণনা করতে হয়। যেমন: প্রথমে ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন এবং ৪ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
- সুসংগত শ্বাস-প্রশ্বাস (Coherent breathing): এই পদ্ধতিতে, নাক দিয়ে ৬ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিতে হয় এবং ৬ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়তে হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় ও ছাড়ার মধ্যে কোনো বিরতি থাকে না।
- শান্ত শ্বাস-প্রশ্বাস (Quiet breathing): হালকাভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং একইভাবে হালকাভাবে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
- শারীরবৃত্তীয় দীর্ঘশ্বাস (Physiological sigh): প্রথমে দুটি ছোট শ্বাস নিন, তারপর মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
এই শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলো অনুশীলনের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শ্বাস-প্রশ্বাস কখনই জোর করে করা উচিত না। যদি মাথা ঘোরায় বা অস্বস্তি হয়, তবে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ে, ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ঔষধের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
সুতরাং, শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীর ও মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারি। মানসিক চাপ কমাতে, ঘুমের সমস্যা দূর করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলগুলো খুবই উপযোগী।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।