শ্বাস-প্রশ্বাস! শরীরের গোপন রহস্য ফাঁস, স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন গবেষণা

শ্বাস-প্রশ্বাস: আপনার স্বাস্থ্যের এক নতুন সূচক?

আমরা শ্বাস নিই, আর এই প্রক্রিয়াটি আমাদের অজান্তেই ঘটে চলে। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরনও আপনার শরীরের জন্য একটি বিশেষ সংকেত বহন করে।

ইসরায়েলের উইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের গবেষকদের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরন এতটাই আলাদা যে, এর মাধ্যমে একজন মানুষকে ৯৬.৮ শতাংশ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরন বিশ্লেষণ করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

গবেষণাটি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় শ্বাস-প্রশ্বাস এবং মস্তিষ্কের মধ্যে গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস মস্তিষ্কের একটি জটিল নেটওয়ার্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা ভাষার ব্যবহার, আবেগ এবং শারীরিক কার্যকলাপের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত।

গবেষক নোয়াম সোবেল বলেন, “শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদের শরীরের প্রায় সবকিছুর সঙ্গেই সমন্বয় করে চলে।”

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরনে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন, তারা ঘুমের সময় দ্রুত শ্বাস নেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে বিরতি কম থাকে।

এছাড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরনে শরীরের ওজন (বিএমআই), ঘুমের চক্র এবং মানসিক অবস্থারও একটা প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যারা নিয়মিত ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ ন্যাসাল টিউব (নাকীয় নল) ব্যবহার করেছেন, যা নাক দিয়ে ফুসফুসে যাওয়া বাতাসের গতিবিধি পরিমাপ করতে সক্ষম। প্রায় একশ জন সুস্থ, তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরন ২৪ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসা গেছে।

এই গবেষণা শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাস্থ্য বিষয়ক রোগ নির্ণয়ের একটি নতুন উপায় হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। গবেষকরা এখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের স্ক্রিনিং করার চেষ্টা করছেন।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ডেটলেফ হেক বলেন, “এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর উপর এর কার্যকারিতা যাচাই করা প্রয়োজন।”

এই গবেষণার ফলাফল আমাদের মনে নতুন কিছু প্রশ্ন তৈরি করে।

শ্বাস-প্রশ্বাস কি আমাদের মানসিক অবস্থার কারণে প্রভাবিত হয়, নাকি শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন আমাদের মানসিকতাকে প্রভাবিত করে? যদি দ্বিতীয়টি সত্যি হয়, তবে এটি আমাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, যেখানে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ধরন মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতোই অনন্য। তাই ভবিষ্যতে শ্বাস-প্রশ্বাস বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *