ব্রেড ফ্লাভের মিসিসিপি কল্যাণ কেলেঙ্কারিতে কী ছিলো? চাঞ্চল্যকর তথ্য!

শিরোনাম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়েলফেয়ার’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে প্রাক্তন ফুটবল তারকা, জড়িত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে সংঘটিত হওয়া একটি বড় ধরনের সরকারি অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন এক সময়ের জনপ্রিয় আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়, ব্রেট ফাউর। দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অনুদানের কোটি কোটি ডলার কিভাবে তছরূপ করা হয়েছে, সেই ঘটনার বিস্তারিত উঠে এসেছে সম্প্রতি। এই ঘটনা শুধু আমেরিকাতেই নয়, বরং সারা বিশ্বের দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ অপচয়ের বিরুদ্ধে একটি বড় উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, যখন রাজ্যের ‘টেম্পোরারি অ্যাসিসটেন্স ফর নিডি ফ্যামিলিস’ (TANF) এবং ‘দি ইমার্জেন্সি ফুড অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম’ (TEFAP) -এর অধীনে থাকা প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি) বিভিন্ন খাতে অবৈধভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই অর্থ মূলত দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাহায্যার্থে ব্যবহারের কথা ছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নেওয়ার পেছনে জড়িত ছিলেন রাজ্যের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। এর মধ্যে ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থার প্রধান এবং স্বয়ং ব্রেট ফাউর। ফাউরকে এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত করার মূল অভিযোগ, তিনি একটি অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত না থেকেও প্রায় ১১ লাখ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১১ কোটি টাকার বেশি) গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, তার মেয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভলিবল খেলতেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য এই তহবিল থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৫২ কোটি টাকার বেশি) সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ফাউর অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই কেলেঙ্কারির বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। তবে, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ফাউরের সঙ্গে একটি অলাভজনক সংস্থার প্রধানের কথোপকথনের কিছু বার্তা (টেক্সট মেসেজ) পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হয়, তিনি এই অর্থ সরানোর বিষয়ে অবগত ছিলেন।

এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন সমাজসেবা বিভাগের প্রধান জন ডেভিস, যিনি ইতিমধ্যেই দোষ স্বীকার করেছেন এবং তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলছে।

ব্রেট ফাউরকে যদিও এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি, তবে তার বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা চলছে। এই মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। ফাউর অবশ্য এই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন, যা আদালত খারিজ করে দেয়। বর্তমানে এই মামলার শুনানির প্রস্তুতি চলছে।

ফাউর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করলেও, ইতিমধ্যেই তিনি বক্তৃতার জন্য নেওয়া ১১ লক্ষ ডলার ফেরত দিয়েছেন। তবে, স্টেডিয়ামের জন্য দেওয়া অর্থের বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি অর্থ কিভাবে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত, এবং কিভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সেই বিষয়টি এই কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো। সরকারি কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *