বিয়েতে মেকআপ ছাড়াই: নববধূ কি পারবেন সবার ধারণা ভাঙতে?

বরবধূ সেজে ওঠা নিয়ে দ্বিধা: মেকআপ ছাড়া কি বিয়ে করা সম্ভব?

বিয়ের দিনটিতে একজন নারীর সাজসজ্জা কেমন হবে, তা নিয়ে সমাজে নানা ধরনের প্রত্যাশা থাকে। কনেকে বিশেষভাবে সজ্জিত করার একটা চল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

কিন্তু সম্প্রতি, একজন নববধূ তার বিয়ের দিনে মেকআপ করা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন। তিনি চান, স্বাভাবিক থাকতে, মেকআপের ভারী প্রলেপ থেকে দূরে থাকতে।

তার এই দ্বিধার কারণ, বন্ধু, মা এবং বোনদের চাপ। তারা সবাই চান, বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি যেন ঝলমলে সাজে সজ্জিত হন।

কনের এই দ্বিধা শুধু তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, বরং এটি সমাজের সৌন্দর্য-সংক্রান্ত ধারণার প্রতিও একটি প্রশ্নচিহ্ন। অনেক সময়, বিয়ের সাজসজ্জা একটি প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়, যেখানে কনেকে সবচেয়ে সুন্দর দেখানোর চেষ্টা করা হয়।

এই ধরনের প্রতিযোগিতায়, কনে তার স্বাভাবিক রূপটি হারিয়ে ফেলেন এবং অন্যের চোখে সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ের সাজসজ্জা হওয়া উচিত এমন, যা কনের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু অনেক সময়, কনেদের ত্বককে নিখুঁত দেখানোর জন্য এমন সব পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ত্বকের ছিদ্র ছোট করার জন্য সূক্ষ্ম ক্ষত তৈরি করা হয় অথবা লেজার রশ্মির মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা কমানো হয়। এসবের ফলে, মেকআপ হয়তো ভালো বসে, কিন্তু ত্বকের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, বিয়ের সাজসজ্জা নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেড়েছে। ছবি তোলার প্রবণতা এবং বন্ধুদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতা, কনেদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।

অনেক কনে চান, বিয়ের ছবিগুলো যেন তাদের “নিখুঁত” রূপে উপস্থাপন করে। মেকআপ শিল্পী এবং ফটোগ্রাফাররাও চান, কনেকে ক্যামেরার সামনে আরও আকর্ষণীয় দেখাতে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? যে মানুষটি কনেকে ভালোবাসে এবং বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, সে তো তার স্বাভাবিক রূপটিই পছন্দ করে।

তবে কেন এই রূপান্তরের চেষ্টা?

ঐতিহাসিকভাবে, বিয়ের সঙ্গে নারীর সম্পত্তির ধারণাও জড়িত ছিল। অতীতে, নারীদের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং তাদের সৌন্দর্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের দিনে, নারীরা তাদের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পেলেও, বিয়েকে এখনো সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়।

এই কারণে, সৌন্দর্য এবং সাজসজ্জা অনেক সময় সাফল্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।

কনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিয়ের দিনটিতে আনন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাটানো। যদি মেকআপ না করার কারণে তিনি আত্মবিশ্বাসী অনুভব করেন, তবে সেটাই তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।

পরিবারের সদস্যদের বোঝানো যেতে পারে, তিনি কেন মেকআপ করতে চান না। এটি সম্ভবত একটি কঠিন কাজ হতে পারে, তবে ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে এটি সম্ভব।

সবশেষে, কনেকে মনে রাখতে হবে, তার নিজের ভালো লাগাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের চাপ বা অন্যদের প্রত্যাশা নয়, বরং নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *