ব্রিটিশ রেল: ২০০ বছর পর, ইতিহাসের পাতায় এক অবিস্মরণীয় যাত্রা!

আজ থেকে দুশো বছর আগে, বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়, যা আধুনিক বিশ্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

ব্রিটেনের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন ছিল সেটি, যখন জর্জ স্টিফেনসনের তৈরি ‘লোকোমোশন নং ১’ নামের ইঞ্জিনটি জনসাধারণের জন্য তৈরি প্রথম রেলপথে চলাচল শুরু করে।

১৮২৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত স্টকটন ও ডার্লিংটন রেলপথে, শিল্ডন থেকে স্টকটন পর্যন্ত প্রায় ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এই ইঞ্জিনটি।

ঐতিহাসিক এই ঘটনার দু’শো বছর পূর্তি উপলক্ষে, শনিবার দিনটিতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে উদযাপন করা হচ্ছে।

শুধু ব্রিটেনেই নয়, সারা বিশ্ব থেকে রেলপ্রেমীরা এই উৎসবে যোগ দিতে একত্রিত হয়েছেন। মূল অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক রেলপথে, যেখানে প্রথম যাত্রাটি হয়েছিল।

এই বিশেষ দিনটি স্মরণ করে, ‘লোকোমোশন নং ১’-এর একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে।

শুক্রবার থেকে এই ইঞ্জিনটি মূল রেল পথের কিছু অংশে তার যাত্রা শুরু করেছে, যা সপ্তাহজুড়ে চলবে।

এই ঐতিহাসিক যাত্রার সাক্ষী থাকতে, ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স এডওয়ার্ডও উপস্থিত ছিলেন।

আশির দশকের অবসরপ্রাপ্ত বিমান প্রকৌশলী, ৮১ বছর বয়সী ডগ হেইন্স, এই পুনর্গঠিত যাত্রা প্রত্যক্ষ করতে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিল্ডনে এসেছিলেন।

তিনি জানান, এই দৃশ্যটি ছিল অসাধারণ এবং আয়োজকদের কঠোর পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

দু’শো বছর আগে, যখন এই রেলযাত্রা শুরু হয়েছিল, তখনও এমন আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

সেসময় সংবাদকর্মীরাসহ বহু মানুষ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে এসেছিলেন।

ডার্লিংটন শহরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিনের মানুষ হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি, ‘লোকোমোশন নং ১’ তাদের জীবনযাত্রা, সমাজ এবং ভবিষ্যতের ওপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলবে।

রেলপথ দ্রুত কাঁচামাল, যেমন- কয়লা ও লোহার আকরিক পরিবহনে সাহায্য করেছে এবং শিল্পজাত পণ্যের সরবরাহ সহজ করেছে।

এর ফলে দ্রুত নগরায়ণ ঘটেছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছিল।

অবসর কাটানোর জন্য সময় বের হওয়ায় পর্যটন এবং সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ভ্রমণের সুযোগ বেড়ে যায়।

উনিশ শতকে ব্রিটেন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও শিল্পশক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল, যার পেছনে এই রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্রুত বিস্তারেও এটি সহায়ক হয়েছিল।

৩৯ বছর বয়সী লুইজ জোনস, যিনি পুনর্নির্মিত ট্রেনটির যাত্রা শুরু হতে দেখেছেন, তিনি বলেন, “এটি চলতে দেখাটা ছিল অসাধারণ।

আমার বাবা রেলপথে কাজ করতেন।

দু’শো বছর আগের দৃশ্য কেমন ছিল, তা দেখার সুযোগ পাওয়াটা জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।

রেলপথ শুধু ব্রিটেনের অর্থনীতিতেই পরিবর্তন আনেনি, বরং বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এটি বাণিজ্য, শিল্প এবং সমাজের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখি, তবে দেশের অর্থনীতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

বর্তমানে, সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *