ব্রিটেনে বাড়ছে রাতের খাবারের নতুন ধারা, সাশ্রয়ী মূল্যে রেস্টুরেন্টের অভিজ্ঞতা।
সাধারণত, সন্ধ্যা আটটা মানেই ডিনার অথবা রাতের খাবারের সময়। কিন্তু এখন যেন সময়টা বদলে যাচ্ছে। ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে সন্ধ্যা ৬টা বা তারও আগে, রেস্টুরেন্টগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
একদিকে যেমন জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে, তেমনই এই সময়ে বিশেষ ছাড়ে খাবার পাওয়া যাচ্ছে বলে আকর্ষণ বাড়ছে ভোজনরসিকদের মধ্যে।
মূলত, এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে। প্রথমত, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করছে। রেস্টুরেন্টগুলোও তাই তাদের গ্রাহকদের জন্য বিশেষ মেনু তৈরি করছে, যেখানে কম দামে পছন্দের খাবার পাওয়া যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ, “পোর্টল্যান্ড”-এ সন্ধ্যা ৬:৩০ এর আগে যারা যান, তারা সাধারণ মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে চার পদের খাবার উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া, “স্প্রিং” রেস্টুরেন্টেও ৩০ পাউন্ডের বিনিময়ে বিশেষ মেনু পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে গতকালের বাসি রুটি দিয়ে তৈরি পুডিংয়ের মতো আকর্ষণীয় খাবারও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি আগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক রেস্টুরেন্ট তাই তরুণদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। ব্রিস্টলের “বালরাশ” -এর মতো কিছু রেস্টুরেন্ট তাদের মেনুর একটি ছোট সংস্করণ চালু করেছে, যা সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায়।
এর ফলে, অল্প বয়সের গ্রাহকরাও ভালো মানের খাবার উপভোগ করতে পারছে।
তৃতীয় কারণটি হলো, অফিসের কাজের ধরনে পরিবর্তন। এখন অনেকেই “হাইব্রিড” পদ্ধতিতে কাজ করছেন, অর্থাৎ কিছু দিন অফিসে এবং কিছু দিন বাড়িতে বসে কাজ করছেন। এর ফলে, কর্মীরা অফিসের কাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বা একসঙ্গে ডিনার করতে উৎসাহিত হচ্ছেন, এবং তারা সাধারণত সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই খাবার সেরে ফেলতে পছন্দ করছেন।
এই পরিবর্তনের একটি প্রভাব পড়েছে পানীয়ের সংস্কৃতিতেও। অনেক রেস্তোরাঁ এখন ডিনারের আগে বিশেষ “মার্টিনি আওয়ার” চালু করেছে, যেখানে কম দামে পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছে।
এই নতুন ধারার ফলে রেস্তোরাঁ মালিকরাও উপকৃত হচ্ছেন। তারা বলছেন, আগে যেখানে রাত আটটার পরে ভিড় হতো, এখন অনেক রেস্টুরেন্টেই সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই গ্রাহকদের আনাগোনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, রেস্টুরেন্টের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে।
তবে, এই পরিবর্তন কি শুধু ব্রিটেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব পড়বে, তা এখন দেখার বিষয়। বাংলাদেশেও যদি মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো খাবারের সুযোগ পায়, তাহলে হয়তো এখানেও এই ধরনের প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান