১৮০ বছর পর রাজকীয় ট্রেনের বিদায়! কেন এমন সিদ্ধান্ত?

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের দীর্ঘ ১৮০ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ রেলযাত্রা এবার সমাপ্তির পথে। আগামী ২০২৭ সালের মার্চ মাস থেকে ব্রিটেনের রাজকীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জনসাধারণের অর্থের সঠিক ব্যবহারের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। খবরটি নিশ্চিত করেছে সিএনএন।

জানা গেছে, রানী ভিক্টোরিয়া ১৮৪০ এর দশকে প্রথম ব্রিটিশ রানী হিসেবে বিশেষ ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর থেকে রাজপরিবারের সদস্যরা এই ট্রেনের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতেন।

তবে বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস সম্ভবত এই ঐতিহ্যবাহী রেলযাত্রার সমাপ্তি প্রত্যক্ষ করতে চলেছেন। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন থেকে রাজপরিবারের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি সফরের জন্য হেলিকপ্টার ও নিয়মিত ট্রেনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হবেন।

ঐতিহ্যপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ব্রিটেনের রেল ইতিহাসের জন্য একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। বিশেষ করে, বাঙ্কিংহামশায়ারের ওলভারটন শহরের মানুষের কাছে এটি একটি বড় আঘাত।

কারণ, এই শহরেই ১৮৪২ সাল থেকে রাজকীয় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। ওলভারটনের বাসিন্দাদের অনেকেই এই ট্রেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এটিকে তারা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে দেখতেন।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই ট্রেনটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। ভেতরের সাজসজ্জা খুব একটা আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না, বরং সাধারণ একটি অফিসের মতো ছিল।

আধুনিকীকরণের অভাবে এবং ব্যবহারের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া, এই ট্রেনের আধুনিকায়ন করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, যা রাজপরিবারের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজকীয় ট্রেনটি মাত্র দুবার চলাচল করেছে, যার খরচ ছিল ১,০৫,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা)। যেখানে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ব্যবহারের খরচ ছিল প্রায় ৮,১৯,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা), এবং নিয়মিত বিমান ও হেলিকপ্টার ভ্রমণে ব্যয় হয়েছে আরও অনেক বেশি।

রাজকীয় ট্রেনের বিদায় শুধুমাত্র ব্রিটেনের জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে রাজকীয় পরিবারের রেলযাত্রার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।

এর আগে, জাপান, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসের রাজ পরিবারগুলোও তাদের নিজস্ব রেল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে ডেনমার্ক ও নরওয়ে এখনও তাদের রাজকীয় সেলুনগুলো ব্যবহার করে।

ঐতিহাসিকদের মতে, রাজকীয় ট্রেনে প্রযুক্তির উদ্ভাবন সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেনের উন্নতিতে সাহায্য করেছে। এই ট্রেনগুলোতে বাথরুম, বিদ্যুতের আলো, রেডিও, টেলিফোন, বাথরুম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং বিলাসবহুল আসবাবের মতো সুবিধা ছিল।

বর্তমানে, ট্রেনটি সম্ভবত একটি শেষ বিদায়ী সফরে বের হবে, যা রেলপ্রেমী এবং রাজপরিবারের অনুসারীদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ হবে। এরপর এটিকে হয়তো কোনো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *