ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটেনের বড় ঘোষণা!

ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত কিয়েভ

ব্রাসেলস, [তারিখ] – ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় দেশটির প্রতি সমর্থন আরও জোরদার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে পশ্চিমা মিত্ররা। শুক্রবার ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে মিত্র দেশগুলোর এক বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।

একইসঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষ দূত মস্কো সফর করেছেন।

যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের যৌথ উদ্যোগে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে প্রায় ৫৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এই অর্থের মাধ্যমে ইউক্রেনকে কয়েক লক্ষ সামরিক ড্রোন, রাডার ব্যবস্থা এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন সরবরাহ করা হবে।

এছাড়াও, ইউক্রেনের সাঁজোয়া যানগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে সচল রাখতে তাদের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চুক্তি করা হবে।

বৈঠকের প্রাক্কালে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জোর দিয়ে বলেন, তাদের দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এখন জরুরি। তিনি আরও বলেন, “আমাদের শহর ও জনপদ রক্ষার জন্য অত্যাধুনিক ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন।

বিশেষ করে রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি থেকে বাঁচতে এটা খুব দরকার।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই সহায়তা চেয়েছেন। গত সপ্তাহে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাঁর নিজের শহরে ৯ জন শিশুসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর তিনি আরও ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চেয়েছেন।

জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের অন্তত ১০টি ‘প্যাট্রিয়ট’ ব্যবস্থা প্রয়োজন, যা রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।”

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

অন্যদিকে, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া তাতে রাজি হয়নি। বরং তারা এর ওপর বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই দ্বিধাগ্রস্ততার কারণ হলো, তারা সম্ভবত এখনই যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে না। কারণ, তাদের বিশাল সামরিক শক্তি বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ ভালো ফল করছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার’ এক মূল্যায়নে জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার মস্কোতে ফিরেছেন, তবে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি।

উইটকফ এর আগে রাশিয়ার কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করেছিলেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, “সামরিকভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি। যতক্ষণ না পর্যন্ত গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।”

সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, রাশিয়া খুব সম্ভবত আসন্ন সপ্তাহগুলোতে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ইউক্রেনের ওপর চাপ আরও বাড়াতে এবং আলোচনার টেবিলে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে চাইছে।

জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনকে চারটি আইআরআইএস-টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং ‘প্যাট্রিয়ট’ ব্যাটারির জন্য ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে।

নেদারল্যান্ডস একটি ‘হকআই’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে।

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হ্যানো পেভকুর বলেছেন, তাঁর দেশ অস্ত্র বাজারের ওপর নজর রাখছে এবং ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার আরও সুযোগ দেখছে।

তিনি মনে করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত ৯ই মের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো ধরনের মীমাংসায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারেন।

কারণ, এই দিনটি রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে।

তাই এখন ইউক্রেনের অবস্থান শক্তিশালী করা আরও জরুরি।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই বৈঠকটি ছিল ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের ২৭তম সভা।

বৈঠকটি যুক্তরাজ্য ও জার্মানির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *