শিরোনাম: যুক্তরাজ্যের ‘গ্রাভেন হিল’: নিজস্ব বাসভবন নির্মাণের এক ব্যতিক্রমী পরীক্ষা, যেখানে সাফল্যের চেয়ে সংকটই বেশি
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের প্রেক্ষাপটে, মানুষের নিজস্ব আবাসনের ধারণাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, শহরের কোলাহল থেকে দূরে, নিজের পছন্দসই নকশায় বাড়ি তৈরির স্বপ্ন অনেকেরই থাকে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারের বিক্সটার শহরের কাছাকাছি অবস্থিত ‘গ্রাভেন হিল’ তেমনই একটি অভিনব প্রকল্পের নাম, যেখানে মানুষ নিজের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করতে পারে। তবে, এই স্ব-নির্মাণ প্রকল্পের যাত্রাটি সবসময় মসৃণ ছিল না।
গ্রাভেন হিলের মূল ধারণাটি ছিল, সাধারণ নির্মাণশৈলীর বাইরে গিয়ে, প্রত্যেককে নিজস্ব ডিজাইন ও রুচি অনুযায়ী বাড়ি বানানোর সুযোগ দেওয়া। এর ফলে, এখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ ঘটেছে – কোনো বাড়ির ছাদ বাঁকা, কোনোটির জানালা গোলাকার, আবার কোনোটির দেওয়ালে দেখা যায় ভিন্ন ধরনের উপকরণ।
কেউ তৈরি করেছেন টাওয়ারের মতো বাড়ি, আবার কেউ বেছে নিয়েছেন সমুদ্র সৈকতের কটেজের আদল।
এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল স্থানীয় ‘চেয়ারওয়েল জেলা পরিষদ’-এর হাত ধরে। তারা ২০১৪ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (Ministry of Defence) কাছ থেকে প্রায় ১৯০ হেক্টর জমি কিনে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে।
নেদারল্যান্ডসের ‘আলমেরে’ শহরের স্ব-নির্মাণ প্রকল্পের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, গ্রাভেন হিলের পরিকল্পনা করা হয়। এখানে প্রায় ২,০০০ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এবং এর জন্য ১১টি ভিন্ন এলাকার নকশা করা হয়।
প্রতিটি এলাকার জন্য নির্দিষ্ট নির্মাণবিধি তৈরি করা হলেও, শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে এক ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
শুরুতে, কিছু ‘অগ্রণী বাসিন্দা’কে আকর্ষণীয় মূল্যে প্লট সরবরাহ করা হয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি টেলিভিশন সিরিজ তৈরিরও পরিকল্পনা ছিল।
এই প্রকল্পের অন্যতম বাসিন্দা লিন প্র্যাট জানান, প্রকল্পটি ‘অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর থেকে আলাদা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু হয়েছিল। এখানে উন্নতমানের, পরিবেশ-বান্ধব এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বাড়ি তৈরির কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, এই প্রকল্পের ধারণা কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হয়েছে। একদিকে যেমন নির্মাণ খরচ বেড়েছে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে ডিজাইন এবং সুযোগ-সুবিধের অভাব দেখা গেছে।
বিশেষ করে, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরিতে সমস্যা হয়েছে। অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাদের ঘরগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই এবং নির্মাণের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্প পরিচালনাকারী সংস্থা ‘গ্রাভেন হিল ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাড্রিয়ান ইউনিটের মতে, এই ধরনের প্রকল্পের সফল পরিচালনা বেশ কঠিন। তার মতে, অবকাঠামো তৈরি এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বর্তমানে, গ্রাভেন হিলে প্রায় ৬০০ পরিবারের বসবাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত একটি মিনি সুপারমার্কেট বা কমিউনিটি সেন্টারের অভাব রয়েছে। বাসিন্দারা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো এখনো পাননি।
গ্রাভেন হিলের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, নিজস্ব বাসভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া একদিকে যেমন স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে, তেমনি সমন্বিত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
ভবিষ্যতের জন্য, এই ধরনের প্রকল্পগুলোতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সামগ্রিক উন্নয়ন – উভয় দিকেই মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian