আশ্চর্য পরিবর্তন! পুরনো দিনের থেকে কতটা আলাদা জীবন?

ব্রিটিশ সমাজে গত কয়েক দশকে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে বিশাল পরিবর্তন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে ঘরের কাজ, এমনকি কর্মজীবনের ধারণা—সবকিছুতেই লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।

সম্প্রতি, কিং’স কলেজ লন্ডন (KCL)-এর পলিসি ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণায় এই পরিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে, যা ১৯৩০ ও ৪০-এর দশকের মানুষের জীবন এবং বর্তমানের জীবনযাত্রার মধ্যেকার পার্থক্য তুলে ধরেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ধারণা অনেক বদলেছে। বর্তমানে, প্রায় ৭০ শতাংশ ব্রিটিশ মনে করেন, ছেলেমেয়েদের স্কুল সময়ের বাইরেও পড়াশোনা করা উচিত।

যেখানে ১৯৩৭ সালে এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে পড়াশোনার (co-education) ধারণাতেও এসেছে পরিবর্তন।

১৯৪৬ সালে যেখানে মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে পড়ানোর পক্ষে ছিলেন, সেখানে এখন এই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশে।

ঘরের কাজের ক্ষেত্রেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। আশি বছর আগে যেখানে প্রায় এক-চতুর্থাংশ পুরুষ (২৪%) কখনোই ঘরের কাজে সাহায্য করতেন না, সেখানে এখন মাত্র ৪ শতাংশ পুরুষ তেমনটা করেন।

যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহিলারা এখনও পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি গৃহস্থালীর কাজ করেন। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মহিলারা প্রতিদিন গড়ে ৩ ঘণ্টা ৩২ মিনিট সময় ব্যয় করেছেন অবৈতনিক কাজের পেছনে, যার মধ্যে ছিল গৃহস্থালী, অন্যের যত্ন নেওয়া এবং স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সময় ছিল গড়ে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট।

নারীদের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ১৯৪০-এর দশকে যেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ নারী পুরুষ হতে চাইতেন, সেখানে এখন এই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশে।

অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যক (প্রায় ৫%) নারী হতে চান।

শারীরিক সুস্থতা এবং কাজের ধারণাতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে, ৬৬ শতাংশ মানুষ শরীরচর্চা করেন সুস্থ থাকার জন্য।

যেখানে ১৯৩৭ সালে এই সংখ্যাটা ছিল খুবই কম, মাত্র ৪৪ শতাংশ। সাঁতার কাটার প্রবণতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

১৯৪৬ সালে যেখানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ সাঁতার কাটতে পারতেন, সেখানে এখন ৭৯ শতাংশ মানুষ সাঁতার কাটেন।

কর্মক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। আশি বছর আগে, মানুষ চাকরির নিরাপত্তার (job security) দিকে বেশি গুরুত্ব দিতেন, যা ছিল ৭৩ শতাংশ মানুষের প্রধান চাওয়া।

তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন ৪৬ শতাংশ মানুষ বেশি বেতনকে (high wages) বেশি গুরুত্ব দেন, যেখানে ৪১ শতাংশের কাছে চাকরির নিরাপত্তা এখনো গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, একটি বিষয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তা হলো সকালে ঘুম থেকে ওঠার অনীহা।

গবেষণায় দেখা গেছে, আজও ৪০ শতাংশ মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা অনুভব করেন।

এই গবেষণাটি মূলত ব্রিটেনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে তৈরি করা একটি সিরিজের অংশ।

১৯৩০ ও ৪০-এর দশকের তথ্যের সঙ্গে ডিসেম্বর ২০২৪-এ ১০০০ ব্রিটিশ নাগরিকের ওপর করা একটি জরিপের ফলাফলের তুলনা করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে।

অধ্যাপক ববি ডাফি, যিনি পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে বলেন, “শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ার কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।”

এছাড়াও, আমরা এখন সহশিক্ষার (co-education) পক্ষে বেশি সমর্থন দেখাচ্ছি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আশির দশকে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে নারী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি ছিল। সেই ধারণা এখন অনেকটাই বদলে গেছে।”

সবমিলিয়ে, ব্রিটেনের মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে, কিছু বিষয় এখনো একই রয়ে গেছে, যা সম্ভবত মানুষের চিরন্তন অনুভূতিরই প্রতিচ্ছবি।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *