ব্রিটিশ সৈকতে: কেমন হয় তাদের ‘সৈকত যাত্রা’?

ব্রিটিশ সমুদ্র সৈকত: আবহাওয়া যেমনই হোক, ছুটি কাটানোর এক আদর্শ স্থান

বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমুদ্র সৈকত মানেই যেন এক অন্যরকম আকর্ষণ। কক্সবাজারের সোনালী বেলাভূমি থেকে কুয়াকাটার শান্ত পরিবেশ—সবখানেই মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে, শুধু বাংলাদেশেই নয়, ব্রিটেনের মানুষের কাছেও সমুদ্র সৈকত এক বিশেষ স্থান।

আবহাওয়া সব সময় অনুকূলে না থাকলেও, বছরের পর বছর ধরে ব্রিটিশরা সমুদ্রের ধারে ছুটি কাটানোর জন্য ছুটে যায়।

পর্যটকদের জন্য ব্রিটেনের প্রথম সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডের স্কারবোরোতে প্রায় চারশো বছর আগে স্পা ওয়াটার চালু হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, সমুদ্রের ধারে অবকাশ কাটানোর ধারণাটা ব্রিটিশদেরই সৃষ্টি।

সমুদ্রের নোনা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে, আইসক্রিম খেতে খেতে, অথবা সমুদ্রের ধারে তৈরি বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সময় কাটানো—এসব যেন ব্রিটিশ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বিশ শতকে ব্রিটিশ সমুদ্র সৈকতগুলোতে মানুষের আনাগোনা কয়েকবার কমে গেলেও, শিল্পী এবং ফটোগ্রাফারদের কাছে এটি বরাবরই আকর্ষনীয় স্থান। ১৯৮০-এর দশকে মার্টিন পারের ছবিতে ব্রিটিশ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা এবং বিনোদনের চিত্র ফুটে উঠেছে।

আবার ১৯৯০-এর দশকে ভিনকা পিটারসেনের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সৈকতে আসা তরুণ প্রজন্মের ছবি।

ব্রিটিশ সমুদ্র সৈকতের এই ছবিগুলো নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দুটি নতুন ফটোগ্রাফি বই। ক্যাথরিন ফেরির একটি বইয়ে পুরনো দিনের পোস্টকার্ডের মাধ্যমে ব্রিটিশ সমুদ্র সৈকতের স্থাপত্যশৈলী এবং সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচির পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে।

পুরনো দিনের এই পোস্টকার্ডগুলোতে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার স্থাপত্য, যেমন – পুরনো দিনের সুইমিং পুল, বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন, ব্যান্ডস্ট্যান্ড, এবং বিভিন্ন ধরণের ছাদের ডিজাইন দেখা যায়।

অন্যদিকে, কারেন শেফার্ডসন ‘সি-সাইড ফটোগ্রাফড’ নামে একটি বইয়ের সহ-লেখক। তিনি ১৮৬০ থেকে ১৯⁠৯০ সালের মধ্যে তোলা বাণিজ্যিক সমুদ্র সৈকতের ছবি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

বিশেষ করে, ‘ওয়াকিজ’ নামে পরিচিত ছবিগুলো—যেখানে সমুদ্রের ধারে হেঁটে বেড়ানো মানুষের ছবি তোলা হতো এবং পরে তা পোস্টকার্ডে ছাপা হতো—তাঁর গবেষণার বিষয়। সেই সময়ে সাধারণ মানুষের ক্যামেরা কেনার বা ছবি আঁকানোর সামর্থ্য ছিল না।

ফলে, এই ধরনের ছবিগুলো মানুষের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অনেক মূল্যবান ছিল।

তবে, সত্তরের দশকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগ বাড়ার কারণে ব্রিটিশ সমুদ্র সৈকতগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা কমে যায়। অনেক সমুদ্র শহর অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছিল, তখন অনেক ব্রিটিশ নাগরিক তাদের দেশের সমুদ্র সৈকতগুলোতে ছুটি কাটাতে শুরু করে। এর ফলে কিছু কিছু জায়গায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

এই সময়ে, সমুদ্র সৈকতগুলোতে বাড়িঘরের দামও বেড়েছে, যা কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মারগেট শহরের বাড়িঘরের দাম এক দশকে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।

সম্প্রতি করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় তিনগুণ বেশি।

লন্ডন-ভিত্তিক ফটোগ্রাফার সোফি গ্রিন, যিনি লকডাউনের কারণে তাঁর কাজ করতে সমস্যায় পড়েছিলেন, সমুদ্র সৈকতকে নতুন কাজের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

তাঁর ‘বিচোলজি’ প্রকল্পটি ব্রিটেনের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে ধারণ করা ছবি নিয়ে তৈরি, যেখানে সৈকতে আসা মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সোফির মতে, সমুদ্র সৈকত একটি বিশেষ স্থান, যেখানে মানুষ নিজেদের অন্যরকম রূপে আবিষ্কার করে। বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যশৈলী, যেমন—রঙিন বিনোদন কেন্দ্র, ক্যাসিনো, অথবা উজ্জ্বল আলোয় সজ্জিত স্থানগুলো—এই সৈকতগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

বর্তমানে, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য সমুদ্র সৈকতগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। সেন্ট ইভসে টেট গ্যালারি, এবং হেস্টিংস ও টার্নার কনটেম্পোরারি গ্যালারির মতো উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, ব্রিটিশদের কাছে সমুদ্র সৈকত একটি বিশেষ স্থান। এখানে সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়, প্রকৃতির কাছাকাছি আসে এবং নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *