বিসি’র সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা: জলবিমান থেকে শুরু করে পর্বত আরোহণ!

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, যেন এক স্বর্গরাজ্য, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার হাতছানি। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত এই প্রদেশে রয়েছে ১7,000 মাইলের বিশাল উপকূলরেখা, যা পর্বতসঙ্কুল ফিয়র্ড এবং প্রায় ৬,০০০ দ্বীপের সমাহার।

এর মধ্যে অধিকাংশই জনমানবহীন। ঘন সবুজ বনভূমি থেকে শুরু করে বরফের চাদরে ঢাকা পাহাড় চূড়া, এখানকার প্রকৃতি যেন এক বিস্ময়। বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়া হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য, যেখানে তারা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারে, উপভোগ করতে পারে বিভিন্ন ধরণের অ্যাডভেঞ্চার।

আসুন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কয়েকটি অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হওয়া যাক:

১. ফ্লোটপ্লেনে চড়ে আকাশ পথে ভ্রমণ:

ভ্যাঙ্কুভার থেকে হারবার এয়ারের (Harbour Air) একটি ফ্লোটপ্লেনে চড়ে বসলে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া এক দারুণ অভিজ্ঞতা। পুরনো দিনের একটি রুটে, ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডা ডিএইচসি-২ বিভার (De Havilland Canada DHC-2 Beaver) বিমানের মাধ্যমে আপনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উপকূলীয় দ্বীপগুলো এবং গ্রামগুলোর উপর দিয়ে যেতে পারবেন।

প্রায় তিন ঘণ্টার এই ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে ম্যাপেল বে (Maple Bay) এবং সল্ট স্প্রিং আইল্যান্ডে (Salt Spring Island)। জনপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় ২৬,০০০ টাকার মতো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী)।

২. রাতের বেলা কায়াকিং:

শেচেল্ট ইনলেটের (Sechelt Inlet) জলে রাতের বেলা কায়াকিং করার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। এখানে আপনি সামুদ্রিক জীবনের এক ভিন্ন রূপ দেখতে পাবেন, যখন কয়েক বিলিয়ন ক্ষুদ্র মাছ এবং প্ল্যাঙ্কটন জলের উপরিতলে উঠে আসে এবং আলো বিকিরণ করে এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করে।

ভ্যাঙ্কুভার থেকে ১২৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই স্থানে রাতের বেলা কায়াকিং করার জন্য ম্যাটা ইকো এক্সপেরিয়েন্সের (Matta Eco Experiences) গাইড ট্যুর রয়েছে, যার খরচ প্রায় ১১,০০০ টাকার মতো।

৩. রকিতে হাইকিং:

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার স্কি রিসোর্টগুলো গ্রীষ্মকালে হাইকিংয়ের জন্য দারুণ জায়গা। এখানকার কেবল কার আপনাকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাবে, যেখান থেকে আপনি ট্রেকিং শুরু করতে পারেন।

কুতেনেই রকিজের (Kootenay Rockies) ফার্নি আল্পাইন রিসোর্টে (Fernie Alpine Resort) ৬,৮৯০ ফুট উচ্চতায় হাইকিং করার সুযোগ রয়েছে। এখানে এক ঘণ্টার সহজ পথ থেকে শুরু করে ছয় ঘণ্টার কঠিন পোলার রিজ ওয়াক পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের হাইকিং-এর ব্যবস্থা আছে।

এখানকার বন্য পরিবেশে ভালুক, এল্ক, ববক্যাট ও নেকড়ের মতো প্রাণী দেখা যায়। গাইডসহ অর্ধদিবসের হাইকিং-এর খরচ প্রায় ২০,০০০ টাকার মতো।

৪. মাউন্ট নিম্বাসের ভায়া ফেরারটা:

যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য মাউন্ট নিম্বাসের ভায়া ফেরারটা (Via Ferrata) একটি দারুণ আকর্ষণ। এটি উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম এবং সর্বোচ্চ ভায়া ফেরারটাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এখানে লোহার সিঁড়ি এবং ১৯6 ফুট দীর্ঘ স্টিলের তারের সেতু রয়েছে। ববি বার্নস (Bobbie Burns) নামক একটি ওয়াইল্ডারনেস লজ থেকে এখানে যাওয়া যায়। এখানে থাকার খরচসহ এই অভিজ্ঞতার জন্য জনপ্রতি প্রায় ৩,৮০,০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।

৫. মুসকওয়া-কেচিকাতে অশ্বারোহণ:

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার উত্তরে অবস্থিত মুসকওয়া-কেচিকা ম্যানেজমেন্ট এরিয়া (Muskwa-Kechika Management Area)। ৬.৪ মিলিয়ন হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে রয়েছে জলাভূমি, পাহাড়, হিমবাহ, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং জলপ্রপাত।

এটিকে “উত্তর দিকের সেরেনেগেটি” হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। এখানে ভালুক, এল্ক এবং পাহাড়ী ছাগলের মতো বন্যপ্রাণী দেখা যায়। এখানকার জঙ্গলে অশ্বারোহণের মাধ্যমে আপনি প্রকৃতির আরও কাছাকাছি যেতে পারেন। রাতের বেলা থাকার খরচ প্রায় ২০,০০০ টাকা।

৬. “গ্রিজলি রিভার”-এ রাফটিং:

বাবিন নদীর (Babine River) বুকে রাফটিং করার সময় আপনি ঈগল এবং ভালুকের মতো বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন। এখানকার স্বচ্ছ জলে রয়েছে বিশাল আকারের স্টিলহেড ও রেইনবো ট্রাউট মাছ।

এই নদীটি ভালুকদের জন্য একটি পছন্দের জায়গা। এখানে র‍্যাফটিং-এর সময় ৪ গ্রেডের (Grade 4) মতো বিপজ্জনক স্রোতের মুখোমুখি হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। ৬ দিনের জন্য ক্যানাডিয়ান আউটব্যাক র‍্যাফটিংয়ের (Canadian Outback Rafting) খরচ প্রায় ৩,৪০,০০০ টাকার মতো।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ভ্রমণের জন্য, বাংলাদেশী নাগরিকদের কানাডার ভিসা প্রয়োজন হবে। ভ্রমণের আগে, কানাডার দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে ভিসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

ঢাকা থেকে কানাডার বিভিন্ন শহরে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়, অথবা দুবাই হয়েও যেতে পারেন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এই মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতাগুলো আপনার ভ্রমণের স্মৃতিকে আরও রঙিন করে তুলবে। প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে, আজই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *