চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের সামরিক প্রধানের সফর।
যুক্তরাজ্যের সামরিক প্রধান, অ্যাডমিরাল স্যার টনি রাডাকিন সম্প্রতি এক অপ্রত্যাশিত সফরে চীন গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম কোনো ব্রিটিশ সামরিক প্রধান চীন সফর করলেন। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ যখন তীব্র হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলো।
সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার জন্য রাডাকিন চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চিফ অব স্টাফ জেনারেল লিউ ঝেনলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষ চীন-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়েও তারা মত বিনিময় করেন।
যদিও যুক্তরাজ্য সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সিস্টেমিক চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করে, তারপরও সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। ব্রিটিশ সূত্রগুলো বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিরক্ষার জন্য চীনের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সফরের সময় কিছু ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাবেক কনজারভেটিভ নেতা স্যার আইয়ান ডানকান স্মিথ বলেন, তিনি এই খবর শুনে বিস্মিত হয়েছেন। তাঁর মতে, চীনকে মিত্র হিসেবে দেখাটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। কারণ, চীন হংকং নিয়ে চীন-ব্রিটিশ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং গণতন্ত্রপন্থীদের গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, তাইওয়ান বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের সদস্য ফ্রান্সেস ডি’সুজা এই সফরকে তাইওয়ানকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের নীতির জন্য ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন না।
চীন সফরের আগে রাডাকিন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জোটের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়ছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর জবাবে বেইজিংও পাল্টা ৮৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
এছাড়াও, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিলি ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে ৩০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় ইউক্রেনে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পর সেখানে একটি ‘পুনরুদ্ধার বাহিনী’ মোতায়েন করার পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়।
অন্যদিকে, রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করা কিছু চীনা নাগরিককে আটক করেছে। যদিও চীন সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান