ব্রিটিশ জাদুঘরের নতুন ট্রাস্টি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, পার্থেনন মার্বেল ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে ভিন্নমত।
ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি তাদের উৎস দেশে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত কিনা, সেই বিতর্কের মাঝে ব্রিটিশ জাদুঘরের নতুন ট্রাস্টি নিয়োগ ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এই জাদুঘরের ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. টিফানি জেনকিন্স।
তিনি একজন শিক্ষাবিদ এবং তাঁর মূল আগ্রহের বিষয় হল, জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের রক্ষণাবেক্ষণ। বিশেষ করে, তিনি প্রাচীন নিদর্শনগুলি তাদের মূল স্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার ধারণার বিরোধী।
এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রে রয়েছে পার্থেনন মার্বেল, যা “এলগিন মার্বেল” নামেও পরিচিত। এই মার্বেলগুলি একসময় এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসের মন্দিরের শোভা বাড়াতো।
উনিশ শতকের শুরুতে লর্ড এলগিন নামের এক ব্রিটিশ কূটনীতিক এই মার্বেলগুলি সংগ্রহ করেন এবং পরে তা ব্রিটিশ জাদুঘরে আসে। গ্রিস সরকার দীর্ঘদিন ধরে এই মার্বেলগুলি তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, এই অমূল্য শিল্পকর্মগুলি তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ড. জেনকিন্সের এই নিয়োগ বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে, কারণ তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ফিরিয়ে দেওয়ার ধারণার বিপক্ষে তাঁর মতামত বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ব্রিটিশ জাদুঘর এইসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং সেগুলি সেখানেই সুরক্ষিত আছে।
তবে, অনেকেই মনে করেন, ঔপনিবেশিক শাসনের সময় জোর করে এই নিদর্শনগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সেগুলিকে তাদের আসল স্থানে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
এই বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঔপনিবেশিক ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রশ্নও। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একসময় সাম্রাজ্য বিস্তারকারীরা বিভিন্ন দেশ থেকে মূল্যবান শিল্পকর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল, যা এক ধরনের ঐতিহাসিক অবিচার।
এই প্রেক্ষাপটে, এই নিদর্শনগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি শুধু আইনি বিষয় নয়, বরং নৈতিক দায়বদ্ধতারও প্রশ্ন।
ব্রিটিশ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডে ড. জেনকিন্সের নিয়োগের পাশাপাশি, আরও কয়েকজন নতুন সদস্য এসেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন লেখক ও টিভি ব্যক্তিত্ব ক্লডিয়া উইংকলম্যান, এবং ইতিহাসবিদ টম হল্যান্ডের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
যদিও এই নিয়োগগুলিতে বিভিন্নতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, ট্রাস্টি বোর্ডে আরও বেশি সংখ্যক ভিন্ন সংস্কৃতি ও বর্ণের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত।
ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জাদুঘরগুলির পরিচালনা ব্যবস্থায় আরও বেশি প্রতিভার সমাবেশ ঘটাতে চায়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস ব্রায়ান্টের মতে, নতুন ট্রাস্টিরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে জাদুঘরগুলির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
তবে, পার্থেনন মার্বেল বিতর্কের নিষ্পত্তি হওয়া এখনও অনেক দূরের পথ। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক চলতেই থাকবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian