ব্রিটিশ মহিলা টেনিসের সাফল্যের গল্প: ঘুরে দাঁড়ানোর এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত
টেনিস খেলার বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে, আর এই খেলার ইতিহাসে নারীদের অবদানও কম নয়। সেরেনা উইলিয়ামস, ভেনাস উইলিয়ামস, মার্টিনা হিঙ্গিস-এর মতো তারকা খেলোয়াড়রা একসময় সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন।
কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ব্রিটিশ মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের শীর্ষ পর্যায়ে আসাটা বেশ কঠিন ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষ এবং দুই হাজারের শুরুর দিকে, ব্রিটিশ টেনিস অঙ্গনে যেন একটা নীরবতা নেমে এসেছিল। শীর্ষ ১০০ জনের মধ্যে কোনো ব্রিটিশ মহিলা খেলোয়াড়ের নাম খুঁজে পাওয়া যেত না বললেই চলে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যপট বদলেছে। এখন ব্রিটিশ মহিলা টেনিস আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। সম্প্রতি, বিলি জিন কিং কাপে (BJK Cup) জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ব্রিটিশ দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে।
এই সাফল্য প্রমাণ করে যে তারা কতটা উন্নতি করেছে। একসময় র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা ব্রিটেনের মহিলা টেনিস এখন নতুন করে জেগে উঠেছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে কয়েকজন খেলোয়াড়ের অবদান অনস্বীকার্য। অ্যান কিয়োথাভং এবং প্রয়াত এলেনা বালটাচা’র মতো খেলোয়াড়রা র্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থানে আসার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
এরপর লরা রবসনের মতো প্রতিভারা এসে নারী টেনিসে নতুন গতি সঞ্চার করেন। যদিও ইনজুরির কারণে অনেকে তাদের সেরাটা দিতে পারেননি, তবুও তাদের প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। পরবর্তীতে, জোহানা কন্টা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ চারে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়রা তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। গত বছর, ব্রিটেনের তিনজন মহিলা খেলোয়াড় শীর্ষ ৬০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
এদের মধ্যে কেইটি বুল্টার (৪০), এমা রাডুকানু (৪৭) এবং সোনে কার্তাল (৫৯) উল্লেখযোগ্য। যদিও এখনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার মতো সাফল্য আসেনি, তবে এই খেলোয়াড়দের উন্নতি চোখে পড়ার মতো।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতা। খেলোয়াড়দের এই লড়াই শুধু তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, বরং দেশের সম্মান রক্ষার জন্যও।
তাদের খেলার ধরনে রয়েছে দৃঢ়তা, যা সত্যিই সম্মানযোগ্য। কেইটি বুল্টার সম্প্রতি তার আগ্রাসী খেলার মাধ্যমে সবার নজর কেড়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন।
এছাড়াও, হ্যারিয়েট ডার্ট, যিনি এক বছর ধরে শীর্ষ ১০০ জনের মধ্যে ছিলেন, এবং জোডি বারাজ-এর মতো খেলোয়াড়রাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফ্রান্সেস্কা জোনস-এর মতো খেলোয়াড়দের গল্পও অনুপ্রেরণামূলক।
ফ্রান্সেস্কার একটি বিরল শারীরিক সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তিনি টেনিস খেলার প্রতি তার ভালোবাসা এবং একাগ্রতা দিয়ে সবার কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
খেলাটি ব্যক্তিগত হলেও, এই খেলোয়াড়রা একে অপরের প্রতি সহযোগীতা ও সমর্থন দিয়ে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা শুধু তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ করছে না, বরং ব্রিটিশ টেনিসকে আবার শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে আসছে।
একসময় যেখানে ব্রিটিশ মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের শীর্ষ পর্যায়ে দেখা কঠিন ছিল, সেখানে তাদের এই সাফল্য সত্যিই আনন্দের। এই খেলোয়াড়দের লড়াই অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান