ব্রুকলিনের ব্ল্যাক চার্চের কণ্ঠ: টিকে আছে, ভাঙছে ঐতিহ্য!

শিরোনাম: ব্রুকলিনের ব্ল্যাক চার্চের কোরাস দল: পরিবর্তনের মাঝে টিকে থাকার গল্প

নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন, যা চার্চের শহর নামে পরিচিত, সেখানে এক সময়ের প্রাণবন্ত দৃশ্যপট আজ অনেকটাই স্তিমিত। এখানকার ব্ল্যাক চার্চগুলোর কোরাস দলগুলো একসময় এলাকার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তাদের গান আর সঙ্গীতের মূর্ছনা পুরো এলাকায় এক ভিন্ন আবহ তৈরি করত।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, অনেক কিছুই বদলে গেছে। গির্জায় মানুষের সংখ্যা কমেছে, এবং এর প্রভাব পড়েছে কোরাস দলগুলোর ওপরও।

ঐতিহ্যবাহী অনেক ব্ল্যাক চার্চ, বিশেষ করে বেডফোর্ড-স্টিউইজেন্ট এবং ক্রাউন হাইটস-এর মতো এলাকাগুলোতে, এখনো কোরাস দলগুলো তাদের গান গেয়ে চলেছে। জেসিকা হাওয়ার্ড, যিনি কনকর্ড ব্যাপটিস্ট চার্চ অফ ক্রাইস্ট-এর গসপেল কোরাসের একজন সদস্য, বলেন, “আমি যখন গান গাই, তখন মনে হয় আমার পূর্বপুরুষেরা গাইছেন।

তার মতে, গান গাওয়াটা শুধু একটা পারফরম্যান্স নয়, বরং তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগের একটি মাধ্যম।

তবে, পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ব্রুকলিনের এই চার্চগুলোতেও। ১৯ শতকে প্রতিষ্ঠিত কনকর্ড ব্যাপটিস্ট চার্চ-এর মতো পুরোনো গির্জাগুলোতেও এখন সদস্য সংখ্যা কমছে। গবেষণা বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ব্ল্যাক প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে চার্চে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

কোভিড-১৯ মহামারী এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্রুকলিনের গির্জাগুলোতে এই পরিবর্তনের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জেন্ট্রিফিকেশন বা নগরায়ণ। এই প্রক্রিয়ার কারণে একদিকে যেমন এলাকার চেহারা পাল্টাচ্ছে, তেমনি অনেক পুরনো বাসিন্দা, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষজন, তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে।

ফলে, গির্জায় আসা মানুষের সংখ্যাও কমছে। এছাড়াও, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চার্চের প্রতি আগের মতো আগ্রহ দেখা যায় না।

সঙ্গীত শিক্ষার অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সত্তরের দশকে নিউ ইয়র্ক সিটির স্কুলগুলোতে সঙ্গীত শিক্ষক এবং সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছিল, যা সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।

গান যে শুধু বিনোদন নয়, বরং আধ্যাত্মিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেই ধারণাটাও ধীরে ধীরে কমে আসছে।

তবে, এই পরিবর্তনের মধ্যেও আশার আলো দেখা যায়। কোরাস দলগুলো এখনো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

অনেক সদস্য, বিশেষ করে প্রবীণরা, তাদের পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করেন এবং গানকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। তারা বিশ্বাস করেন, গান তাদের একত্রিত করে, শোক ও কষ্টের মধ্যেও আশা জাগিয়ে তোলে।

ব্ল্যাক চার্চগুলোর কোরাস দলগুলো ব্রুকলিনের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা শুধু গানই গায় না, বরং একটি সম্প্রদায়ের চেতনাকে ধারণ করে।

এই দলগুলো পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তাদের এই সংগ্রাম আমাদের দেখায়, কীভাবে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সময়ের সঙ্গে টিকে থাকতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *