মনের ভেতরের কষ্টগুলো যখন কথায় প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন অনেক কিছুই যেন এলোমেলো হয়ে যায়। ঘরদোর অগোছালো হয়ে যাওয়া তেমনই একটি ইঙ্গিত। আর তাই, সাত বছর ধরে নীরবে বোনের ঘর পরিষ্কার করে আসছেন ২১ বছর বয়সী ডেভিড এনগো।
ডেভিডের ২৬ বছর বয়সী বোন জেনিফার এনগো-এর ঘর যখন অপরিষ্কার হয়ে যায়, মেঝেতে হাঁটাচলারও জায়গা থাকে না, তখনই ডেভিড বুঝতে পারেন তার বোন হয়তো ভালো নেই। মনের গভীরের কোনো কষ্ট যেন বাসা বেঁধেছে।
বোনের এই মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে, কোনো কথা ছাড়াই ডেভিড ঝাড়ু হাতে বোনের ঘরে যান, ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করেন।
আসলে, ডেভিডের কাছে পরিচ্ছন্নতাটা মুখ্য নয়, বরং বড় বোনকে এইটুকু বোঝানো যে, তিনি একা নন— সবসময় তার পাশে একজন আছে। কাপড়ের স্তূপ আর নানান অনুভূতির ভিড়ে ডেভিড যেন এক শান্তির আশ্রয়।
আমি মনে করি, মাঝে মাঝে বোনের ঘর পরিষ্কার করাটা খুব দরকার। কারণ, একটি ঘর যেন মনের প্রতিচ্ছবি। যখন দেখি তার জীবনযাত্রার মান ভালো নেই, তখন বুঝি জীবনের অন্য দিকগুলোতেও সে হয়তো struggle করছে।
ভাই-বোনের এই জুটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ পরিচিত। মজাদার ভিডিও তৈরি করে তারা সবার মন জয় করেছেন। যেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে কৌতুকপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
ডেভিড জানান, “ছোটবেলায় আমরা খুব একটা ঘনিষ্ঠ ছিলাম না, তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়েছে। সম্ভবত কঠিন শৈশব এবং হাসির মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে।”
টিকটকে ডেভিডের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ লক্ষ, আর জেনিফারের অনুসারীর সংখ্যা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ৯০ লক্ষের বেশি। ডেভিড আরও বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার ক্ষেত্রে জেনিফারই আমার অনুপ্রেরণা। সে খুবই যত্নশীল এবং যাদের ভালোবাসে, তাদের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে।”
বোনের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ডেভিড গত সাত বছর ধরে তার ঘর পরিষ্কার করছেন। ডেভিড বলেন, “জেনিফার আমার দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। মেরুদণ্ডে বাঁকা এবং একটি ফুসফুস ও কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকাটা সহজ নয়।”
“ছোট ভাই হিসেবে মাঝে মাঝে এটা খুব কষ্টের লাগে। কারণ, আমি চাই না আমার বোন এমন পরিবেশে ঘুমাক বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিক। ঘর ধুলোয় ভরে গেলে তার স্বাস্থ্য নিয়ে আমার চিন্তা হয়। তার তো একটি ফুসফুস, তার উপর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও খুবই দুর্বল।”
যদিও তিনি স্বীকার করেন, মাঝে মাঝে তার হতাশ লাগে এবং বোনের এই পরিস্থিতিকে তার আলস্য মনে হয়। কারণ, তিনি তো জেনিফার যা লড়ছে, সেই লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাননি। তবে দিন দিন তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক কিছু শিখছেন।
ডেভিড আরও বলেন, “আমি এখন বুঝি, যখন কেউ হতাশায় ভোগে, তখন এর কারণ কেবল আলস্য বা মন খারাপ নাও হতে পারে। বরং, দিন কাটানোর জন্য একজন মানুষ শুধু চেষ্টা করে যায়।”
জেনিফার যখন দাঁত ব্রাশ করেন বা ঠিকমতো খাবার খান, তখন ডেভিড গর্বিত হন। বোনের প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করতে তিনি কখনোই পিছপা হন না।
যদিও তাদের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের ধরনটা সরাসরি নয়, তারা অন্য উপায়ে একে অপরের প্রতি তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। “আমরা হয়তো সরাসরি ভালোবাসি বলি না, কিন্তু ছোটখাটো বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া বা কাজ করার মাধ্যমে আমরা ভালোবাসা দেখাই।” এমনটাই জানান ডেভিড।
ভাই-বোনেরা একসঙ্গে ভিডিও তৈরি করার পাশাপাশি, নিজেদের মধ্যে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। “একসঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়া, শপিং মলে ঘোরাঘুরি করা কিংবা গভীর রাতে দোকানে যাওয়া—আমি চেষ্টা করি তার প্রতি ধৈর্যশীল থাকতে, তাকে অনুভব করতে এবং তার কথা শুনতে। আমি তার জন্য উপহার কিনি, যাতে সে ভালো অনুভব করে।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেভিড হতাশাকে আরও গভীর সহানুভূতি ও উপলব্ধির সঙ্গে দেখতে শিখেছেন। যারা কঠিন সময়ে তাদের ভাইবোনদের সাহায্য করতে চান, তাদের প্রতি তার পরামর্শ হলো—সবচেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল এবং সহযোগী হওয়া।
ডেভিড বলেন, “এটা শুধু মন খারাপের চেয়েও বেশি কিছু। হতাশা দুর্বল করে দিতে পারে। এমনকি সাধারণ কাজগুলোও কঠিন মনে হতে পারে। আমি বরং বোনের ঘর পরিষ্কার করতে চাই, যাতে সে গভীর হতাশায় তলিয়ে না যায়। ভালোবাসার প্রকাশ সবসময় কথায় হয় না, বরং কিছু কাজেও প্রকাশ পায়।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো সহায়তার জন্য আপনার পরিচিত কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: People