বনবাসী আদিবাসীদের সাথে ব্রুস প্যারির ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা! হতবাক দর্শক!

আদিবাসী জীবন ও আধুনিকতার সংঘাত: ব্রুস প্যারির নতুন অভিযানে অ্যামাজনের ওয়াইমাহা উপজাতি।

প্রায় ২০ বছর আগে, ব্রুস প্যারির ‘ট্রাইব’ (Tribe) অনুষ্ঠানটি বিবিসি’তে (BBC) সম্প্রচারিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে তাদের জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয়।

এবার তিনি ফিরে এসেছেন নতুন অভিযান নিয়ে, গন্তব্য কলম্বিয়ার আমাজন রেইনফরেস্ট (Amazon Rainforest)। সেখানে ৬০০ সদস্যের ওয়াইমাহা (Waimaha) উপজাতির সঙ্গে মিশে তাদের জীবনযাত্রা এবং আধুনিকতার সঙ্গে তাদের সংগ্রাম ক্যামেরাবন্দী করেছেন তিনি।

ছোট্ট একটি বিমানে যাত্রা শুরুর পর নৌকায় গভীর অরণ্যের ভেতর দিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয় ব্রুসকে। এরপর ওয়াইমাহা উপজাতির প্রধান পেদ্রোর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।

পেদ্রো জানান, শ্বেতাঙ্গদের সম্পর্কে ওয়াইমাহাদের ভালো ধারণা নেই, কারণ অতীতে তাদের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। ওয়াইমাহারা প্রায় ২,০০০ বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছে।

একসময় রাবার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। এমনকি ১৯৭০-এর দশকে তাদের শিশুদের জোর করে নিয়ে গিয়ে ক্যাথলিক মিশনারিরা (Catholic missionaries) অন্য শিক্ষা দিতে শুরু করে।

অনুষ্ঠানে দেখা যায়, ব্রুস প্যারির সঙ্গে একটি পরিবারের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কাঠ কাটার কাজে সাহায্য করে তিনি তাদের মন জয় করেন।

এরপর তিনি তাদের সঙ্গে ‘মোজোজয়’ (mojojoy) নামের এক প্রকার লার্ভা খান, যা তারা কাঁচা অবস্থায় খায়। এরপর স্থানীয় চিকিৎসক পেদ্রো একটি গাছের পাতা থেকে রস বের করে ব্রুসের চোখে দেন, যা তার চোখের জন্য উপকারী।

ওয়াইমাহা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য ব্রুসকে কিছু কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী, তিনি বিশেষ এক ধরনের গাছের নির্যাস ‘ইয়াগে’ (yage) গ্রহণ করেন, যা তাদের এক ধরনের অনুষ্ঠানে কাজে লাগে।

এই অনুষ্ঠানে আদিবাসীরা সারিবদ্ধভাবে গোল হয়ে নেচে এবং মাটির ওপর পা’ ঠুকে এক ধরনের সম্মোহিত অবস্থায় যায়। ব্রুসও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে ওয়াইমাহাদের জীবনযাত্রার আরও কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। বাইরের দুনিয়া থেকে আসা আধুনিকতার ছোঁয়া তাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে।

ওয়াইমাহাদের শিশুরা এখন বাইরের স্কুলে যায়, যেখানে তাদের কলম্বিয়ার জাতীয় পাঠ্যক্রম পড়ানো হয়। এর ফলে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, আধুনিকতার এই ছোঁয়া কি তাদের জীবনকে উন্নত করছে?

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা এবং আধুনিকতার মধ্যেকার এই দ্বন্দ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রুস প্যারির এই অনুষ্ঠানে সেই বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।

উন্নয়নের নামে বাইরের দুনিয়ার সংস্কৃতি তাদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা গভীরভাবে নিরীক্ষণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের মধ্যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *